বাণিজ্যিক পুকুরে কোটি টাকা রাজস্ব কারচুপি


আবু হাসাদ কামাল, পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় গত ১০ বছরে উপজেলা প্রায় ১২ হাজার একর ধানি ও ফলজ বাগানের জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছি ইউপিতে প্রায় পাঁচ হাজার একর ধানী জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। কেবল মাত্র ভূমি কর্মকর্তাদের তদারকির না থাকায় নতুন পুরাতন মিলে প্রায় ১২ হাজার একর পুকুর থেকে সরকার প্রতিবছর আড়াই কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

পুঠিয়া সদর, পাইকপাড়া, বানেশ্বর ও শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১১ ইং সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সর্ব মোট এক লাখ ৯২ হাজার ৬৪ বর্গ কিলোমিটার নিয়ে পুঠিয়া উপজেলার অবস্থান। মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫শ’৬৫ একর। এর মধ্যে খাস পুকুর রয়েছে একশ’ ৯২টি ও অর্পিত ১৭ টি পুকুর। অপরদিকে ব্যক্তি মালিকানাধিন পুকুর রয়েছে আরো এক হাজার ৬শ’ ৫১টি।

উপজেলা ভূমি সার্ভেয়ার আব্দুস সামাদ জানান, তবে নতুন করে কত একর জমিতে বাণিজ্যিক পুকুর খনন করা হয়েছে বা এর সংখ্যা কত তার কোনো পরিসংখ্যান নেই চার ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে নেই । তিনি বলেন, নতুন করে ধানি জমিতে কেউ পুকুর খনন করলে আমরা আইনী ব্যবস্থা নিব।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম বলেন, সরকারী নিয়ম অনুসারে ১৪২২ বাংলা সাল থেকে ধানি জমির প্রতি শতাংশ দুই টাকা হারে খাজনা ধার্য করা হয়েছে। অপরদিকে বাণিজ্যিক পুকুরের খাজনা ধরা হয়েছে (রাজশাহী জেলার জন্য) প্রতি শতাংশ ইউপি এলাকায় ৪০ টাকা, পৌর এলাকায় ১০০ টাকা ও সিটি এলাকায় ৩০০ টাকা হারে। তিনি আরো বলেন, পূর্বের তালিকা যাঁরা পুকুর মালিক তারা নিয়ম মাফিক খাজনা দিচ্ছেন। আর গত কয়েক বছরের মধ্যে নতুন করে যে পুকুর খনন করা হয়েছে সে গুলোর মালিকরা ধানি হিসাবে খাজনা দিচ্ছেন। পুকুর মালিকরা জমির আকার পরিবর্তনের কোনো আবেদন না করায় আমরা ধানি জমি হিসাবেই খাজনা নিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, নতুন পুকুর খননের সংখ্যা ও পরিমান এখনো তালিক হিসাবে তৈরি করা হয়নি। তবে এই বিষয় গুলো জেলা ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা নেই।

শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছি এলাকার সচেতন কৃষকরা অভিযোগ তুলে বলেন, দুই ইউপি এলাকায় গত ১০ বছরে প্রায় ১০ হাজার একর ধানী জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ পুকুর মালিকরা শতশত বিঘা বাণিজ্যিক পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আবার অনেকই পুকুর খনন করে ইজারা দিয়েছেন। পুকুর মালিকরা ভূমি অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের সহয়তায় বানিজ্যিক পুকুরের খাজনা দিচ্ছেন ধানী জমি উল্লেখ করে। এতে করে সরকার প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার নতুন বানিজ্যিক পুকুর গুলো থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কমিশনার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে খননকৃত পুকুর গুলোর বিষয়ে যাচাই-বাচাই ও খাজনা আদায়ের বিষয়ে জেলা ও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। সে মোতাবেক কোনো নিদের্শ আসলে বানিজ্যিক পুকুর গুলোর তালিকা তৈরি করে সরকারী নিয়ম অনুসারেই খাজনা আদায় শুরু হবে।

 


শর্টলিংকঃ