ধান ও গমে ক্যাডমিয়াম দূরীকরণে রাবি শিক্ষকের সাফল্য


হোসাইন মুহাম্মদ সাজ্জাদ, রাবি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কয়েকজন গবেষক ধান ও গমে ক্যাডমিয়াম দূরীকরণ গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেছেন। গবেষকরা ৩০টি জাতের ধান নিয়ে গবেষণা করেছেন।

গবেষকরা ‘সোনার বাংলা’ নামের এক ধরনের জাত পেয়েছেন যা ক্যাডমিয়াযুক্ত মাটিতে লাগানো হলেও গাছটি ক্যাডমিয়াম গ্রহণ করে না। এই জাতের সঙ্গে অন্য জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের ব্রিডিং বা জিন স্থানান্তর করা সম্ভব। হাইড্রোফোনিক পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ লেভেল পর্যন্ত ‘সোনার বাংলা’ জাতটি ক্যাডমিয়াম গ্রহণ করার পরেও শস্য দানাকে সুরক্ষা দিতে পারে। যা অন্য জাতের ধানের বীজগুলোর এই কার্যক্রমতা নেই বলে দাবি করেছে গবেষকদল। এ ছাড়াও গমের বীজে প্লাজমা টিট্টমেন্টের মাধ্যমে ক্যাডমিয়াম দূর করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আহমদ হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে দুটি গবেষক দল দীর্ঘ দুই বছর ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করেন। ত্রিশটি জাতের ধান নিয়ে তারা গবেষণা করেন। তারা ‘সোনার বাংলা’ নামের ধানের জাতটি ক্যাডমিয়াম বিষক্রিয়া হ্রাসের কার্যক্ষমতা খুঁজে পান। এছাড়াও প্লাজমা ট্রিটমেন্ট প্রয়োগের মাধ্যমে গবেষণা দলটি গমগাছের বীজকে ক্যাডমিয়াম প্রতিরোধী করতে সক্ষম হন। গবেষণায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু রেজা, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মামুনূর রশিদ তালুকদার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইউজিসি অধ্যাপক ড. এম আলফাজ উদ্দীন সহায়তা করেছেন।

গবেষণাকর্ম দুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থীরা কাজ করেছেন।গবেষণাটি ২০১৭ সালের প্রথম দিকে শুরু করে চলতি বছরে শেষ হয়েছে। তাদের এই গবেষণাকর্ম দুটি আমেরিকা ও নেদারল্যান্ডের দুটি জার্নালে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

সোনার বাংলা জাতটির বীজে এমন কিছু জিন রয়েছে যা ক্যাডমিয়ামকে প্রতিরোধ করে। ক্যাডমিয়াম যদি গাছে ঢুকেও পড়ে তাহলে গাছের শিকড়ে ভ্যাকিউলে (গহ্বর) তা জমা হয়। ভ্যাকিউলের ফাইটোকিলেটিক জিন বেশ শক্তিশালী হওয়ায় ক্যাডমিয়ামকে গাছে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়। আহমদ হুমায়ন কবীর জানান, এই জাতের সঙ্গে অন্য কোন জাতের ধানের বীজের সংকরায়ন করা হয় তাহলে ক্যাডমিয়াম সহিতা ডিএনএ জিনটি পার করিয়ে দেয়া সম্ভব। বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের লোকদের এই গবেষণাকর্মটি কাজে আসবে বলে মনে করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাডমিয়াম এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক। কল-কারখানগুলোতে ক্যাডমিয়াম ব্যবহার করা হয়। কল-কারখানার বর্জ্যগুলো পুকুর বা নদীতে ফেলা হচ্ছে। একপর্যায়ে এর মাধ্যমে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে ক্যাডমিয়াম। জমিতে ধান, গম চাষ করায় ক্যাডমিয়াম গাছগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে শস্যের ফলন কমার পাশাপাশি মানুষের রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘সোনার বাংলা’ জাতের বীজটি প্রাকৃতিকভাবে মাটি থেকে ক্যাডমিয়াম গ্রহণ করছে না। জাতটি ক্যাডমিয়াময্ক্তু মাটিতে জন্মালেও এর ফলন স্বাভাবিক থাকে।’

গমের ক্যাডমিয়াম দূরীকরণে প্লাজমা ট্রিটমেন্ট:
মাটির পিএইচ এর মাত্রা রয়েছে। যার স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৭ (সাত)। যখন বীজে প্লাজমা ট্রিটমেন্ট দেয়ার পরে তা ক্যাডমিয়ামযুক্ত মাটিতে লাগানো হয় তখন গাছের শেকড় হাইড্রোজেন আয়ন নিঃসরণ করে। শিকড়ের আশেপাশে মাটিতে পিএইচ কমে যায়। তখন ক্যাডমিয়াম গাছের জন্য অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায়।

ক্যাডমিয়াযুক্ত একটি গমের বীজ ইলেকট্রিক চেম্বারে রেখে বিভিন্ন ভোল্টের শকড দিয়ে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এতে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। প্রাথমিকভাবে গমের উপর গবেষণা করা হয়েছে। ধান ও ভুট্টাসহ অন্যান্য শষ্য বীজেও প্রয়োগ করে দেখা হবে।


শর্টলিংকঃ