নগরীতে ফেরাদের পরীক্ষায় মেয়রের সহযোগিতা চায় রামেক


বিশেষ প্রতিবেদক :

রাজশাহীতে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়লেও করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী নন নগরবাসী। এ নিয়ে ভয়াবহ উদ্বেগের কথা বলছেন চিকিৎসকরা। তাই বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে ফেরা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে রাজশাহী সিটি মেয়রের সহযোগিতা চেয়েছেন  মেডিকেল কলেজের  ল্যাব কর্তৃপক্ষ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত এই ল্যাবে পরীক্ষার পর যতগুলো পজিটিভ পাওয়া গেছে সবগুলোই সিটির বাইরে। পজিটিভ হওয়া ব্যক্তিদের সবাই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। কিন্তু রাজশাহী সিটির ভেতরেও ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর বা অন্য কোনো জেলা থেকে প্রচুর লোক ফিরেছেন বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু তারা কেউ করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী হয়ে আসছেন  না চিকিৎসকদের কাছে।

এর কারণ হিসেবে ডা. নওশাদ আলী বলছেন, অনেকের মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা না দিলেও পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া গেছে। অথচ তারা দিব্যি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এমন কি নিজেরাও বিশ্বাস করতে চায় না, তারা পজিটিভ বহন করছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলছিলেন, রাজশাহীর মোহনপুরে যে নারীর করোনা ধরা পড়েছে তার শরীরে কোনো ধরনেরই উপসর্গ দৃশ্যমান নেই। একই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও তার স্বামীর রেজাল্ট নেগেটিভ। অথচ নারী একবার হাঁচি দিলে অন্তত ১৫জন সংক্রমিত হতে পারে। তার ভাইরাসের অবস্থা এমন ভয়াবহ রকমের!

এছাড়া, অনেকেই সামাজিক মর্যাদার ভয়েও করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছেন না। যা পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। অধ্যক্ষ নওশাদ আলী এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী নগরীতে ফেরাদেরও করোনা পরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নগরীতে  পরীক্ষা হওয়া ১৮জনের নমুনায় পজিটিভি না মিললেও বেশি বেশি পরীক্ষা করা জরুরি।নগরীতে ফেরা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে আমরা সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনেরও সহযোগিতা চেয়েছি। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে যাতে রাজশাহীতে ফেরা ব্যক্তিরা নিজেদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তায় চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবাইলজি বিভাগের প্রধান অধ্যপক ডা. বুলবুল হাসান জানান, শনিবার পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা এসেছে ৯৬৮টি। এরমধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ৭৩৭টির। এই পিসিআর মেশিনে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিনই এর চেয়ে বেশি সংখ্যক নমুনা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা আসছে এই ল্যাবে।

এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল সিভিল সার্জনদের জানানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কোনো রোগী পচিটিভ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতেও দেরি হচ্ছে। ফলে করোনা ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা থেকে যায়। তাই দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগে আরেকটি পিসিআর মেশিনসহ করোনা ল্যাব চালুর পরামর্শ দিয়েছেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. বুলবুল হাসান।

ছুটিসহ সপ্তাহে সাতদিনই পরীক্ষার সরকারি নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলিতে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহ আবশ্যিকভাবে খোলা রাখা এবং নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।কিন্তু জনবল সংকটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবটি সপ্তাহে সাতদিনই চালু রাখা যাচ্ছে না।


শর্টলিংকঃ