নববধূর সাজেই ছিল পূর্ণি : কেবল দেহটাই নিথর


নিজস্ব প্রতিবেদক :

নববধূর হাতে মেহেদির রঙ, গায়ে গহনা, পায়ে নুপুর আর পরনে লাল বেনারসি জড়ানো। কেবল দেহটায় নিথর। রাজশাহীতে নৌকাডুবির চারদিন পর নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণির মরদেহ পেয়েছে জেলেরা। সোমবার সকাল ৭ টার দিকে শ্যামপুর ঘাট থেকে পূর্ণির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গেল তিনদিনে আটজনের মরদেহ পাওয়া গেলেও নিখোঁজ ছিল পূর্ণি। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা হলো ৯জন। সকালে নববধূর মরদেহ পাওয়ার পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

নববধূ পূর্ণির মরদেহ

নববধূ বেশে গিয়েছিলেন স্বামীর বাড়ি। আর ফিরলেন লাশ হয়ে। এখনও হাতের মেহেদির রঙই শুকোয়নি তার। লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি জড়ানো রয়েছে পরনেই। নতুনভাবে জীবনটা শুরুর আগেই পরপারে পাড়ি জমালেন নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণি (১৮)। একটি নৌকাডুবি কেড়ে নিলো তার জীবনের সব সাজানো স্বপ্ন।ঘটনার চারদিনের মাথায় সোমবার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর শাহাপুর এলাকার পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুইটি খাতুন পূর্ণিমা রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে।

রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ  জানিয়েছেন, নববধূ সুইটির মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে তাদের চারদিনের উদ্ধার অভিযান শেষ হলো। রাজশাহীর পদ্মা নদীতে গত শুক্রবার (৬ মার্চ) নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ নয়জনের মধ্যে কেবল সুইটির মরদেহই পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ সকালে সুইটির মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় অন্য কেউ আর অবশিষ্ট রইল না। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো নয়জনে। আর ঘটনার পর বিভিন্নভাবে উদ্ধার হয়ে এসেছেন আরও ৩২ জন।

বর রুমন ও কনে পূর্ণি

এদিকে, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই রাজশাহীর পদ্মায় বর-নববধূকে বহন করা নৌকা ডুবেছে। মূলত এই কারণটি উল্লেখ করেই জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল হতে যাচ্ছে। কমিটির প্রধান রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম গতকাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের সময় দুই কার্যদিবসের মধ্যে এর প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে রোববার (৮ মার্চ) রাতেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু আরো কয়েকটি কাজ বাকি থাকায় সোমবার (৯ মার্চ) সকাল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির দাখিল করতে যাওয়া ওই প্রতিবেদনে এই নৌ দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।

রাজশাহী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম বলেন, ছোট ওই ডিঙ্গি নৌকায় যেখানে ৪/৫ জন যাত্রী নেওয়া সম্ভব সেখানে ২০ জনেরও বেশি করে যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। ফলে মাঝ নদীতে হালকা ঝড়ের কবলে পড়ে পরপর দুইটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।

তৃতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান 

এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ওই দুই নৌকার মাঝি বা নৌকার যাত্রীদের কারোও কাছেই লাইফ জ্যাকেট ছিলো না। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা ও প্রমোদতরী আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। সেইসাথে নৌকার মাঝিরও বয়স নির্ধারণ করে দেওয়াসহ প্রতিটি নৌকায় যাত্রী ধারণ ক্ষমতা লিখে দেয়ারও সুপারিশ করা হচ্ছে তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনে।

এর আগে গত শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় পদ্মার চরে বৌ-ভাত অনুষ্ঠান শেষে বর-নববধূসহ ৪১জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা কনেপক্ষের বাড়িতে ফিরছিল। ফেরার পথে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় দুইটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বর রুমনসহ ৩২ জন শুক্রবার রাতেই জীবিত উদ্ধার হন। পরে নিহত ৮ জনের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন।প্রাথমিকভাবে লাশ দাফন-কাফনের জন্য জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে জেলা প্রশাসন।


শর্টলিংকঃ