পাঁচ উপজেলায় পুকুর খনন বন্ধে আদালতের নির্দেশ 


মাহবুব হোসেন, নাটোর :

অবশেষে নাটোরের পাঁচ উপজেলায় পুকুর খনন বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।  লইয়ার্স সোসাইটি ফর ‘ল’নামের একটি সংগঠনের করা রীটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
ধান চাষ থেকে মাছ চাষে লাভ বেশি হওয়ার ধুয়া তুলে নাটোরে দেদারসে চলছিল তিন ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন।  এই পুকুর খননের সাথে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাসহ  জনপ্রতিনিধি জড়িত থাকায় কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছিল না। তবে

জানা গেছে, মাঝে মধ্যে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও কোন ভাবেই তা বন্ধ হচ্ছিল না। অভিযানের সময় কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও প্রশাসন চলে আসার পর আবারও পুকুর খনন আগের নিয়মেই চলে। ফলে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন অনেকটা ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও এবার পুকুর খনন বন্ধের বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।

জেলার ৫টি উপজেলায় ফসলী জমি নষ্ট করে পুকুর খননের ওপর রোববার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। ঢাকাস্থ লইয়ার্স সোসাইট ফর ‘ল’নামের একটি সংগঠনের পক্ষে মহাসচিব এড.মেজবাহুল ইসলাম আতিক জনস্বার্থে দায়ের করেন।

রীটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নাটোরের সাতটি উপজেলার মধ্যে সদর, নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও বাগাতিপাড়া এই পাঁচ উপজেলায় কৃষি জমিতে সব ধরনের পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।

এছাড়া পাশ্ববর্তী পাবনা জেলার সদর, পাবনা ঈশ্বরদী, সুজানগর এবং আটঘরিয়া এই পাঁচ উপজেলাতেও পুকুর খনন বন্ধের আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি এ বিষয়ে তদারকি ও ব্যবস্থা গ্রহণেরর জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নাটোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রীটকারীর আইনজীবী এড. জালাল উদ্দিন উজ্জল বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে নাটোরে বিভিন্ন উপজেলায় মহামারি আকারে চলছে পুকুর খনন। যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি পুকুর খনন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের সূত্র ধরেই ঢাকাস্থ লইয়ার্স সোসাইট ফর ‘ল’নামের একটি সংগঠনের মহাসচিব হাইকোর্টে রীট করেন।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু বলেন, লিখিত ভাবে হাইকোর্টের আদেশের কপি এখনও পাই নি। তবে রীটকারী আইনজীবী বিষয়টি ফোনে জানিয়েছে। আদেশের  পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে এলাকায় মাইকিং করে পুকুর খনন বন্ধের  নির্দেশ দেয়া হবে। তারপর কেউ যদি উচ্চ আদালতের নিষেধাক্কার পরও পুকুর খনন করে তার বিষয়ে নিয়মিত মামলা করবো আমরা।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ বলেন, পুকুর খনন বিষয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার  বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমরা পুকুর খননের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।

নাটোর কৃষি বিভাগের হিসাবে, ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত আবাদি জমিতে পুকুর খনন সহনীয় মাত্রায় ছিল। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে এ প্রবণতা স্থানীয় কৃষকদেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে নয় হাজারের বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৫-০৬ থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত নাটোর জেলায় আবাদি জমি খুব একটা কমেনি। কিন্তু এর পর থেকেই আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে জেলায় আবাদি জমি ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৮ হেক্টর, তা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৮ হেক্টরে। অর্থাৎ এই সাত বছরে কমেছে ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর।


শর্টলিংকঃ