নাম তার কভিড বট, বাংলাদেশে তৈরি


ইউএনভি ডেস্ক:
একদল শিক্ষার্থী তৈরি করেছে এমন একটি রোবট, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের হাত পরিষ্কার করার পাশাপাশি মানুষকে স্যানিটাইজারের ব্যবহারও শেখাতে পারে। এখানেই শেষ নয় এটির গুণ।

নাম তার কভিড বট, বাংলাদেশে তৈরি

মানবদেহের তাপমাত্রা পরিমাপ থেকে শুরু করে করোনার লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী করোনা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সেসব জানাতে পারে এই রোবট। বিস্তারিত গোলাম মোর্শেদের কাছে

কভিড বট
গত বছর থেকেই শেখ নাঈম হাসানের পরিকল্পনা ছিল মুজিববর্ষে একটি রোবট তৈরি করার, যা কি না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকাহিনি শোনাবে। কিন্তু করোনার ফলে সে প্রজেক্ট আর সফল হয়ে ওঠেনি। লকডাউনে ঘরে বসে থাকতে থাকতেই মাথায় আসে আরেকটি রোবটের তৈরির আইডিয়া, যা কি না জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করবে। আর সেখান থেকেই শুরু ‘প্রি ডক্টর কভিড বট’ তৈরির কাজ।

রোবটটির কাজ সম্পর্কে দলনেতা শেখ নাঈম হাসান মুন জানায়, ‘রোবটটির সামনে কোনো মানুষ স্যানিটাইজার চাইলে রোবটটি তাকে স্যানিটাইজারের ব্যবহার শেখানোর পাশাপাশি তার হাতে স্যানিটাইজার ঢেলে দেয়। এরপর আরেক হাত দিয়ে রোবটটি নিজের সঙ্গে যুক্ত আইআর টেম্পারেচার টেস্টারটিকে ওই ব্যক্তির কপালের সামনে নিয়ে তাঁর শারীরিক তাপমাত্রা সেভ করে রাখে। একই সঙ্গে কিছু প্রশ্নও জিজ্ঞেস করে।

এরপর ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যাচাইয়ের মাধ্যমে তার উত্তরগুলো সংরক্ষণ করে। এরপর সব উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তিকে জানায় সে সময় তার কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বা তাঁর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কি না। এ ছাড়া রোবটটি নিজ মুখে মানুষকে করোনা পরিস্থিতিতে কিভাবে সুস্থ থাকা যায়, কী কী করা উচিত-অনুচিত সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানায়।

যেহেতু করোনার উপসর্গগুলো ফ্লু বা অন্যান্য কিছু সাধারণ রোগের উপসর্গের সঙ্গে অনেকাংশেই মিলে যায়, তাই বর্তমানে একজন মানুষের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই তাঁর মনে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় লক্ষ করা যায়। অনেকে তো না জেনেই যাচ্ছেন হাসপাতালে।

অথবা সুস্থ মানুষও যাচ্ছেন করোনা টেস্ট করাতে। ফলে সেখান থেকেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন ‘কভিড-১৯’-এ। আর এই ভ্রান্তি থেকে যাতে মানুষ বেরিয়ে আসতে পারে এবং শুরুতেই যেন ডাক্তারের কাছে না যায়, সেই উদ্দেশ্যে এই রোবটটি তৈরি করা হয়েছে। রোবটটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।

বঙ্গবটস টিম
রোবটটি তৈরির নেতৃত্বে ছিল যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ নাঈম হাসান। রোবটের প্রতি আগ্রহ তার ছোটবেলা থেকেই। এই পর্যন্ত বিভিন্ন মডেলের ৩০টি রোবট তৈরি করেছে সে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করে নিজের রোবটিকস প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবটস’।

নাঈমের রয়েছে বেশ কিছু অর্জন—‘আইআইসিটিই ২০১৬’তে খুদে বিজ্ঞানীর খেতাব পায় সে। ২০১৭ সালে ‘সলভ এ থন’ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে দেশসেরা। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০১৮ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তার।

এই রোবট তৈরিতে শেখ নাঈম হাসানের সঙ্গে কাজ করেছে ‘বঙ্গবটস টিম’। রোবটটি তৈরির মূল পরিকল্পনা এবং সফটওয়্যারের দেখভালের নেতৃত্ব ছিল শেখ নাঈম হাসানের। স্ট্রাকচার আর হার্ডওয়্যারের দায়িত্বে ছিল যথাক্রমে যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কে এম সাদ্বীপ শাহাদাৎ দ্বীপ এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নেয়ামুল হাসান সাদ। আর অ্যাসিস্ট্যান্ট স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার দায়িত্বে ছিলেন হাসিব আহমেদ রিজভী।

তিনি পড়াশোনা করছেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কপোতাক্ষ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। আউটফিট ডিজাইনারের দায়িত্বে ছিলেন হাসনা জাহাঙ্গীর। এই রোবট তৈরিতে আরো সাহায্য করেছেন সাইয়েদুল মোস্তায়িন তরঙ্গ এবং আর এন বাঁধন।

ভবিষ্যৎ ভাবনা
রোবটটি বর্তমানে প্রি-পাইলটিং কন্ডিশনে আছে। নাঈম হাসান জানায়, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য করোনার এই দুর্যোগময় সময়ে মানুষকে সাহায্য করা। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে এটির সেবা পৌঁছে দিতে চাই। আইসিটি ডিভিশন এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রজেক্টটা নিয়ে বেশ কয়েকবার কথাও হয়েছে।


শর্টলিংকঃ