- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

নার্সারি করে কোটিপতি নাটোরের দিপক


মাহাবুব হোসেন, নাটোর:
শুরুটা ছিল ২০০৩সালে। মাত্র ১০কাঠা জমি লীজ নিয়ে নার্সারি ব্যবসা চালু করেন শহরতলীর বনবেলঘড়িয়া এলাকার যুবক দিপক কুমার ঘোষ। সে ১০কাঠা জমিতে পেয়ারা, লেবু আম সহ বিভিন্ন জাতের কলম চারা তৈরী শুরু করেন। প্রাথমিক ভাবে এতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫হাজার টাকা। বছর না ঘুরতেই সেই ১০কাঠা জমির কলম চারা বিক্রি করেন দ্বিগুণ দামে। এরপর থেকে দিপক কুমার ঘোষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

নার্সারি করে কোটিপতি নাটোরের দিপক

এক বছরের মাথায় আরো তিন বিঘা জমি লীজ নিয়ে ‘মেসার্স প্রকৃতি নার্সারি’ নাম দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমান ১০০ বিঘা জমিতে ঠেকেছে দিপক কুমার ঘোষের প্রকৃতি নার্সারি পরিমান। দিপক শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেনি, বর্তমানে তার নার্সারিতে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।

বেকারত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি নিয়মিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে অনেক নারী-পুরুষের। বর্তমানে দিপক কুমার ঘোষের নার্সারি ছাতনি পন্ডিতগ্রাম, ছাতনী স্লুইচগেট, ছাতনী স্কুল পাড়া, পাইকেরদোল সহ ৬/৭টি স্থানে চারা তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে ১০০বিঘা জমিতে নার্সারি থাকলেও প্রতিবছর ৫ থেকে ১০বিঘা জমিতে নার্সারির পরিধি বাড়ছে।

নার্সারি তে কাজ করছে নারী শ্রমিকেরা

এসব জমি থেকে তার প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০লাখ পিচ চারা উৎপাদন হয়। যা থেকে আয় আসে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। বর্তমানে নার্সারি ব্যবসা দিপককে বানিয়েছে কোটিপতি। তার নার্সারিতে উৎপাদিত চারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যে নারীরা নার্সারির বিভিন্ন কলমের বেড পরিষ্কার করছেন, কেউ গাছে পানি ঢালছেন। এমন ব্যস্ততার মাঝে কথা হয় পারুল বেগম, রেশমা, সিরাজুল ইসলাম, রবি, মিলন সহ বিভিন্ন শ্রমিকদের সাথে।

নার্সারি শ্রমিক রেশমা বেগম বলেন, দিপক কুমার ঘোষ এর নার্সারি চালু করার পর থেকে এখানে কাজ করি। নিয়মিত কাজ হওয়ার কারনে আমাদের কোন দিনই বসে
থাকতে হয়না। তাছাড়া অল্প শ্রমে আমরা মাসে ৫ থেকে ৬হাজার টাকা করে পায়। এতে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

পারুল বেগম বলেন, বাড়ির পার্শ্বে হওয়ার কারনে আমাদের দূরে কোন কাজের সন্ধানে যেতে হয়না। পরিবার সামলেই আমরা নার্সারিতে কাজ করতে পারি। আমার
মতো অনেক নারী এখানে কাজ করে স্বালম্বী হয়েছে। আগে মরিচের ব্যবসা করতেন সিরাজুল ইসলাম। নার্সারি শুরুর এক বছরের পর থেকেই তিনি দিপক কুমার ঘোষের সকল কিছু দেখা শুনা করছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে একেক জন শ্রমিক সপ্তাহে পারিশ্রমিক নেয়। একেকজন মাসে ৮ থেকে ১০হাজার টাক পর্যন্ত বেতন পায়। অন্য কাজে শ্রম বেশি, কিন্তু টাকা কম, আর এই কাজে শ্রম কম, টাকা বেশি। যার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে এখানে শ্রম দিয়েআসছি। বর্তমানে সারা দেশেই দিপকের নার্সারিতে উৎপাদিত চারা বিক্রি হয়।

এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট বেশি চারা যায়। ভাল মানের চারা হওয়ার কারনে সারা দেশেই প্রকৃতি নার্সারির
চারা কদর রয়েছে। তাছাড়া অনেক চারা ভারত থেকে আমদানী করেন এই দিপক কুমার। নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি দিপক কুমার থাই পেয়েরা ৪৫বিঘা, কাশ্মীমেরি কুল ৭বিঘা, মাল্টা বাগান ৮বিঘা, আমের বাগান ২৫বিঘা, ড্রাগন ৭বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে।

নার্সারি করে কোটিপতি নাটোরের দিপক

দিপক কুমার বলেন, ২০০১ সালে এসএসসি পড়াশুনার পাশাপাশি গুড় ব্যবসা শুরু করি। গুড় ব্যবসা চলাকালীন সময়ে এইচএসসি পাশ করি। এরপর ২০০৩সালে ছোট পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে নার্সারি ব্যবসা চালু করি। নাটোরের সাবেক উদ্যানতত্ত্ববিদ ও বর্তমানে ঈশ্বরদীর টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুল আউয়াল স্যার এর পরামর্শে আমি নার্সারি ব্যবসা চালু করার পর থেকে পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি। প্রতি বছর আমার নার্সারিতে ২০লাখের বেশি চারা উৎপাদন হয়।

যা থেকে বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিক্রি হয়। দিপক কুমার আরো বলেন, আমার নার্সারিতে অনেক বেকার নারী-পুরুশের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়েছে। কম পরিশ্রমে তারা বাড়তি আয় করতে পারছে। তাছাড়া আমার দেখা দেখি অনেক বেকার যুবক এই পেশার দিকে ঝুঁকছে।

নাটোরের সাবেক উদ্যানতত্ত্ববিদ ও বর্তমানে ঈশ্বরদীর টেবুনিয়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুল আউয়াল বলেন, দিপক ছোট পরিসরে শুরু করলেও
এখনতার নার্সারির পরিধি বেড়েছে। তার নার্সারি কিভাবে আধুনিকায়ন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। তাছাড়া ভালমানের চারা কিভাবে তৈরী এবং বাজারজাত
করা যায় সে পরামর্শ দিপক কাজে লাগিয়ে আজ সফল ব্যবসায়ী।