নিয়ম ভেঙে টাইমস্কেল নেয়া বিএমডিএ’র প্রকৌশলীরা ফেরত দেন নি টাকা


বিশেষ প্রতিবেদক :

বাড়তি ইনক্রিমেন্টের টাকা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট ৭৩ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বিএমডিএ’র অডিট অফিসার শ্রী বাসুদেব চন্দ্র মহন্ত।  কিন্তু এখনো বেশির ভাগ কর্মকর্তাই টাকা ফেরত দেন নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

দুর্নীতির কারখানায় পরিণত হয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ। নিজেদের ইচ্ছেমতো টাইমস্কেল নির্ধারণ করে অতিরিক্ত বেতন নেয়া, বাণিজ্যিক দামে বিদ্যুৎ কিনে তা আবাসিক দরে সরবরাহ, অহেতুক প্রকৌশলীদের বাসভবন নির্মাণসহ অন্তত ২৪খাতে অনিয়ম ধরা পড়েছে বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।শুধ তাই নয়, দুর্নীতি ঢাকতে প্রতিবছরই কেটে নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের টাকাও। তবে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, অডিটে গড়মিল হলেও কোথাও কোনো দুর্নীতি হয় নি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ে অধীনে পরিচালিত সংস্থা বিএমডিএতে নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে ২০১২ থেকে ২০১৭সাল পর্যন্ত অডিটে। এরমধ্যে বিভিন্ন জোন কার্যালয় ভবনের তৃতীয়তলায় সহকারী প্রকৌশলীদের বাসা নির্মাণ, নিয়ম ভেঙে ৭৩জন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান, বাণিজ্যিক দামে বিদ্যুৎ কিনে কর্মকর্তাদের বাসায় আবাসিক হিসেবে সরবরাহ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে সরকারি নিয়ম না মানা ও পিপিআর লঙ্ঘন করে কেনাকাটাসহ ২৪টি খাতে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।

বিএমডিএ’র সহকারী হিসাব রক্ষক মতিউর রহমান বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তারা ইচ্ছেমতো নিজেদের টাইমস্কেল ও ইনক্রিমেন্ট বাড়িয়ে নিয়েছেন। এঘটনা ঘটেছে অন্তত তিন দফা। এ নিয়ে নোটশীট দিলেও তা আমলে নেন নি নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ।

এদিকে, এসবখাতে অনিয়মের মাধ্যমে ৬কোটি ৬৯লাখ ৮৫হাজার টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে-এমন তথ্য উঠে এসেছে অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে। যার প্রাথমিক প্রমাণও মিলেছে-বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের এই কর্মকর্তা। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুদকের অনুসন্ধান দল বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র তলব করে।দুদকের রাজশাহী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন ২৪টি খাতে তারা দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন।এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

তবে দুদকের অনুসন্ধানকে উড়িয়ে দিলেও বাড়তি ইনক্রিমেন্টের টাকা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্বীকারও করেছে বিএমডিএ’র অডিট অফিসার শ্রী বাসুদেব চন্দ্র মহন্ত।  কিন্তু এখনো বেশির ভাগ কর্মকর্তাই টাকা ফেরত দেন নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসব দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার কথা বলে অডিট কর্মকর্তাদের নামে প্রতি বছরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে কেটে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। এই ঘুষ বন্ধে বিএমডিএ’র ভূক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা  ২০১৫ সালেই চিঠিও দিয়েছেন বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।

তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, অডিট আপত্তিগুলো ধীরে ধীরে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। আর যেগুলো ভুলত্রুটি আছে সেগুলো শুধরে নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ