নুতফা নিরু’র গল্প ‘জাদু’


জাদু

– নুতফা নিরু

একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। সঞ্চালিকা এবার ঘোষণা দিলেন মঞ্চে জাদু পরিবেশিত হবে।
– সুধি দর্শক এবার আপনাদের সামনে জাদু পরিবেশন করবেন দেশের স্বনামধন্য যাদুশিল্পী প্রিন্স সুমন।
দর্শকের হাল্কা করতালির মধ্যে মঞ্চে উঠে আসলেন জাদুকর। জাদুকরের পরনের পোশাক ঝকঝকে টানটান স্ত্রি করা। সাদা কালো স্ট্রাইপ শার্ট, কালো প্যান্ট, শার্ট ইন করে পরা কালো বেল্ট, চকচকে কালো জুতো। জাদুকর মঞ্চে উঠেই কথা বলতে শুরু করলো।
– সুধী দর্শক, শুরুতেই আমি প্রিন্স সুমন আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আজকের অনুষ্ঠানের জাদু পর্বে। আপনারা জেনে গেছেন আমি একজন যাদুশিল্পী। আজ আপনাদের মাঝে এসেছি জাদু দেখাতে আনন্দ দিতে।
কথা বলতে বলতে সে হাতে তুলে নিলো একটা কালো রঙের লাঠি পাশে রাখা টেবিল থেকে। তারপর দর্শকের দিকে লাঠিটা তাক করে বলল,
– শুরুতেই আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি ফুলের শুভেচ্ছা।
শুভেচ্ছা জানানোর সাথে সাথে জাদুকরের লাঠির মাথায় দেখা গেল একগুচ্ছ ফুল। দর্শকের করতালির শব্দ সোনা গেল সাথে সাথেই। করতালির শব্দ কমে এলে জাদুকর আবার বলতে শুরু করল।
– জাদু হচ্ছে সত্যিকারের নির্মল বিনোদন। জাদু হলো বিজ্ঞান। কোনো মায়া বা মন্ত্রবলে আপনাদের আছন্ন আমি করবনা। আপনারা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখবেন প্রতিটা মুহূর্ত। এক মুহূর্তের অমনোযোগের কারনে আপনার মনে হতে পারে কোনও জাদুর মায়ায় আমি আপনাদের ভুলিয়ে দিয়েছি আচ্ছন্ন করে দিয়েছি কোনো মন্ত্রে। তাই আমি আপনাদের আবারও অনুরোধ করব প্রতিটি মুহূর্তে মনোযোগ দিয়ে দেখতে।
হাতের লাঠিটি পাশে রেখে এবার জাদুকর আবার বলতে শুরু করল,
– জাদু শুরু করার আগে আমরা এই অনুষ্ঠানে শান্তির দূত সাদা পায়রা উড়িয়ে পৃথিবীবাসীর জন্য শান্তি কামনা করবো। কিন্তু পায়রা কোথায় পাবো! আমি একটা ছোটো যাদু করে একটা পায়রা নিয়ে আসতে পারি। এই দেখুন আমার হাতের টুপিটা খালি কিছুই নেই এর মধ্যে। এখন এই টুপির ভেতর থেকেই নিয়ে আসবো শান্তির দূত পায়রা কে।
কিন্তু টুপি থেকে কোন কিছুই আনতে পারল না সে বারবার চেষ্টা করেও। তার পায়রাটা কখন কোন ফাঁকে উড়ে চলে গেছে সে জানেনা। জাদুকরের বিফল হওয়ায় দর্শকের মধ্যে হাসাহাসি শুরু হয়ে গেছে। দর্শকদের তুমুল হৈ-হুল্লোড় হাসি শিষ তালি এবং দুয়ো ধ্বনির মধ্যে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও পারলনা বলল,
– পৃথিবীতে এখন এত যুদ্ধ হিংসা হানাহানি চলছে যে পায়রা আসতে চাইছে না। আমরা বরং মূল যাদু পর্বে চলে যাই।
এবার যাদুকর হাতের টুপিটা সামনের টেবিলের একপাশে রেখে হাতবাড়িয়ে তুলে নিল এক প্যাকেট তাস। হাতের তাসগুলো দর্শকদের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে ধরে বলল,
– আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমার হাতে এক প্যাকেট তাস আছে। এই জাদুতে আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন হবে আমার। কে কে মঞ্চে এসে আমাকে সাহায্য করতে চান হাত তুলুন। আগ্রহী কোন দর্শক না পেয়ে সে নিজে থেকেই দুজন দর্শক কে ডেকে তুলল ওপরে। সামনের সারি থেকে দুজনকে নির্দিষ্ট করে বলল,
-আপনি আসুন
তারপর আরেকজনকে,
– আপনি, আপনি হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি আসুন। শুরুতেই আমি এই তাসগুলো উল্টাপাল্টা করে নিচ্ছি।
দর্শকদের বেশির ভাগই এর মধ্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দর্শক সারি থেকে কেউ একজন বলল,
– যাই একটা বিড়ি খাইয়া আসি।
সাথে সাথে আর দুয়েকটা সমর্থন শোনা গেল।
– চল যাই।
– চল চল
অন্ধকারের মধ্যে কিছু দর্শককে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল। এদিকে মঞ্চে সেই দুজন দর্শক উঠে আসল। জাদুকর ততক্ষণে তাস সাফল করা শেষ করে ফেলেছে। দুজন মঞ্চে উঠে এলে পরে সে দর্শকদের উদ্দ্যেশে বলল,
– আমরা দুজন সম্মানিত অতিথিকে পেয়ে গেছি আমাদের মাঝে চলুন জাদু শুরু করি। প্রিয় দর্শক আপনারা আমার হাতে কিছু তাস দেখতে পাচ্ছেন। এই তাসগুলো কোনটা কোথায় আছে আমি জানি না। আমি না দেখেই বলে দিব ওনারা কোন তাসটি বেছে নিয়েছেন।
খুবই সহজ জাদু। দর্শক সারি থেকে দুয়ো ধ্বনি শোনা গেল। জাদুকর বিব্রত ভাব লুকিয়ে বলতে থাকল।
– চলুন শুরু করা যাক। আপনাদের একজন একটি কার্ড বেছে নিন। আপনারা দেখুন কোন তাস। আমাকে একদম দেখাবেন না।
একজন একটি কার্ড বেছে নিয়ে জাদুকরকে ফেরত দিল। জাদুকর কার্ডটি সবার ওপরে রাখল তারপর উল্টে সবচেয়ে নিচের কার্ডটা দেখে নিল। দুজন অতিথির অপরজন জাদুকরের হাত থেকে কার্ড গুলো নিয়ে উল্টাপাল্টা করে বলল
– এবার খুঁজে বার করুন জা-দু-কর সাহেব।
জাদুকর হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। দর্শক সারিতে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ শোনা গেল। দর্শকদের বেরিয়ে যেতে দেখা গেল হুল্লোড় করতে করতে। জাদুকর পরাজিতের মতো দাঁড়িয়ে রইল মঞ্চে মাথা নিচু করে একা।

জাদুকর তার বাড়িতে বসে আছে। তার মনে হচ্ছে দুর থেকে হাঁড়িপাতিল নাড়াচাড়া করার শব্দ ভেসে আসছে। অপমানিত জাদুকরের চোখ দৃষ্টি শূন্য, সে অপলক তাকিয়ে আছে। হাঁড়িপাতিলের ঠোকাঠুকির শব্দটা বাড়ছে। জাদুকরের সম্বিত ফিরল প্রচন্ড শব্দ আর একটানা চিৎকার শুনে। নারী কণ্ঠে কেউ চিৎকার করে কিছু বলছে। জাদুকরের চেহারায় বিব্রত এবং অসহায় ভাব ফুটে উঠল এবার। একজনের কন্ঠই শোনা যাচ্ছে জবাব দিচ্ছেনা আর কেউ। প্রচন্ড রেগে জাদুকরের স্ত্রী রান্নাঘরে হাড়ি পাতিল ঠোকাঠুকি করছে। সে জাদুকর সুমন কে উদ্দেশ্য করে বলছে,
– আমি এসব আর সহ্য করবনা। একদম না। এইসব জাদুটাদু দেখানো আজ থেকে বন্ধ। কাজ করবা কাজ। ভদ্রলোকেরা যেরকম কাজ করে তেমন কাজ।
ডাইনিং রুমের লাগোয়া রান্না ঘরে জাদুকরের বউ খুন্তি দিয়ে হাঁড়িতে কিছু একটা রান্না করছে আর বলছে,
– আমি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে রেখেছি। কাল থেকে ভদ্রলোকের মতো তার অফিস বসবা।
এবার সে রান্না ঘরের চুলার সামনে থেকে খুন্তি হাতে এগিয়ে আসতে জাদুকরের সামনে। যা বলছি ঠিক তাই করবা। আর তামাসা দেখিয়ে লোক হাসানোর দরকার নেই।
জাদুকরের বৌ একেবারে জাদুকরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জাদুকর তার মুখের দিকে অসহায়ের মত তাকালো। জাদু সে ভালো দেখাক আর খারাপ, কাজটা সে ভালবাসে এই শিল্প চর্চা ছেড়ে দেয়ার কথা সে ভাবতেই পারেনা।
তাকে চুপ থাকতে দেখে তার স্ত্রী আরও রেগে গেল,
– কি কথা বলনা কেন? কাল থেকে দুলাভাইয়ের অফিসে বসবা। ডিসিশন ফাইনাল। আরে কোন কথা বলে না! লোক হাসাতে লজ্জা লাগেনা তোমার।
জাদুকর টের পেল এবার তার রাগ হচ্ছে। এদিকে তার স্ত্রী বলেই চলেছে।
– পোড়া কপাল আমার। কত ভাল ভাল ছেলের বিয়ের প্রপোজাল ছিল। আমি কাঊকে পাত্তা দেইনি। কারো কোন কথা শুনিনি। তোমার সাথে প্রেম করে আজকে আমার এই অবস্থা। রাস্তা ঘাটে তাস পিটিয়ে বেড়ায়।
এ কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে জাদুকর উঠে দাঁড়ালো ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তার বৌ পাশ থেকে তার হাত আকঁড়ে ধরে বলল, কি ব্যাপার আমার কথার জবাব না দিয়ে কই যাও। কোথাও যেতে পারবেনা এখন।
জাদুকর প্রচন্ড রেগে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বেরিয়ে গেল। জাদুকরের বৌ পড়ে গিয়ে ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল,
– আমার হাত।
জাদুকর পেছনে ফিরেও তাকাল না একবারও বাইরে বেরিয়ে সশব্দে দরজা বন্ধ করল সে। দরজা বন্ধ করে জাদুকর ঘুরে দাঁড়াল। প্রচণ্ড তীব্র তীক্ষ্ণ একটা শব্দ শুনে সে চোখ মুখ কুচকে কানে হাত চাপা দিল। কিন্তু শব্দের তীব্রতা এতটুকুও না কমে বরং বাড়তে থাকল। জাদুকর কানে হাত চাপা দিয়ে নিচু হতে হতে মাটিতে প্রায় পড়ে যাবার মত একটা হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ল।
এক সময় তার মনে হল শব্দটা আর নেই। সে আস্তে আস্তে কান থেকে হাত সরাল। তারপর শব্দটা আর শুনতে না পেয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল। শব্দের তীব্রতায় তার মাথা ঝিমঝিম করছে। অসুস্থ লাগছে। কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেল। দেখল সে দাঁড়িয়ে আছে একটা জঙ্গলের সামনে।
কিন্তু সে তো তার বাসার করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিল। সে দেখল জঙ্গলের ঘেসো পাতাঝড়া মেঝেটা তার দিকে পিলপিল করে এগিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে সে ঘুরল দরজা খুলে ভেতরে ঢুকবে বলে। কিন্তু পেছনে ঘুরে সে দেখল তার পেছনে দরজার জায়গায় একটা বিশাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে। সে আরও অবাক হয়ে দেখল গাছের কাণ্ড গাঢ় নীল রঙের। ওপরের দিকে তাকাতে দেখল গাছের ডালগুলো নীল রঙের আর পাতা গুলো সব কমলা রঙের।
সে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। গাছগুলোর পাতা লাল, হলুদ অথবা কমলা রঙের আর কাণ্ডগুলো সব হাল্কা অথবা গাঢ় নীল। এটা কোন জায়গা! সে এখানে কি করে এল!
বিস্মিত ভিত জাদুকর কি করবে কিছুই বুঝতে না পেরে কয়েক পা হাঁটল আলো আঁধারির মধ্যে।
তার পর চারদিকে তাকিয়ে একটা দিক ঠিক করে হাঁটতে শুরু করল। জাদুকর হাঁটছে। সে অনুভব করছে বাতাস বইছে। পাতা ঝরে পড়ছে , শুকনো পাতার ওপর দিয়ে সে হাঁটছে কিন্তু কোথাও কোনও শব্দ হচ্ছে না। অস্বাভাবিক নিরবতা চারদিকে এমনকি পাতা ঝরে পরারও কোনও শব্দ নেই। তার মনে হল সে অনেক্ষন যাবত কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। সে তার কানে আঙ্গুল দিয়ে ঝাঁকাল। কানে চাপড় দিল কয়েকটা তবু কিছুই শুনতে পেলনা। সে কিছুটা হতাশ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
হাঁটতে হাঁটতে এক সময় তার মনে হল তার মাথার ওপর গাছের ওপর কিছু একটা দুলছে।
সে আস্তে আস্তে মাথাটা ওপরের দিকে তুলে মাথার ওপর আকাশের দিকে তাকাল এবং অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। একটা মেয়ে অনেক ওপরে দোলনায় দুলছে যেন আকাশে মেঘের থেকে তার দোলনার দড়ি ঝুলে আছে তার আঁচল উড়ছে, আর তার পা টা মাঝেমাঝে গাছের মাথাটা প্রায় ছুঁয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ সে দোলনা থেকে দুলতে দুলতেই নেমে হাঁটতে শুরু করল। সে হাঁটছে আর বাতাসে উড়ছে তার আঁচল। কি করবে কিছু না বুঝতে পেরে হতবিহ্বল জাদুকর মেয়েটাকে অনুসরন করে হাঁটতে শুরু করল। এক সময় সে বূঝতে পারল মেয়েটা তাকে দেখতে পেয়েছে। সে তখন আকাশে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটা ওপর থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামছে। মাটি থেকে কিছুটা ওপরে ধীরে সে নেমে এসে থামল জাদুকরের মুখোমুখি। তারপর আস্তে ধীরে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো জাদুকরের দিকে। সম্মোহিতের মতো জাদুকর তার হাত বাড়িয়ে মেয়েটির হাত ধরতে চেষ্টা কর্ল কিন্তু পারলনা। সে আবার মেয়েটির বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরতে চেষ্টা করল। কিন্তু পারলনা। জাদুকর বুঝতে পারল মেয়েটিকে সে দেখতে পেলেও তাকে ধরা সম্ভবনা কারন সে ছায়ার মতো তাকে মানুষের মতো দেখালেও সে আসলে ছায়া। এক ছায়া মানবীর সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীরের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো মাটিতে এসে পড়ে তার কোনও ছায়া মাটিতে পড়েনা। তাকে ধরা বা ছোঁয়া সম্ভবনা। জাদুকর দেখল মেয়েটার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা। তার চোখ ম্লান সেই চোখে কোনও আনন্দ নেই।
মেয়েটা ভেসেই থাকল তারপর আস্তে আস্তে পেছনের দিকে এক পা করে পিছিয়ে গেল। হাতটা বাড়িয়েই রাখল জাদুকরের দিকে।

জাদুকরের মনে হোল মেয়েটা তাকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে। মেয়েটা সাথে যাবে কিনা বুঝতে পারছেনা। কিন্তু এখানে কিছুই সে চিনেনা মেয়েটার সাথে গেলে বিপদ হতে পারে আবার স্বাভাবিক পৃথিবীতে ফেরার পথও পেতে পারে। এই ভাবনা থেকে সে মেয়েটাকে অনুস্রন করে হাঁটতে শুরু করল। মেয়েটা যখন নিশ্চিত হোল জাদুকর তার সাথে আসবে সে ভেসেভেসে সামনে এগুতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটার পিছু পিছু জাদুকর একটা পুরনো ভাঙা মন্দিরের সামনে এসে উপস্থিত হল। মেয়েটা একবার ঘুরে তাকাল যাদুকরের দিকে তারপর হাত দিয়ে ইশারা করে মন্দিরের ভিতর ঢুকে গেল। কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে জাদুকরও মেয়েটার পিছু পিছু মন্দিরের ভিতরে গিয়ে ঢুকল। তারপর মন্দিরের গেট উঠোন সব পেরিয়ে সে গিয়ে দাঁড়াল একটা মূর্তির সামনে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েই সে দেখল এই মূর্তিটিও মেয়েটির মত ছায়া। আসল মূর্তিটা টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে আশেপাশে। মেয়েটি বিষণ্ণ মুখে মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর সে জাদুকরের দিকে তাকাল। জাদুকরের মনে হোল মেয়েটি তার সাহায্য চাইছে তাই ওকে এখানে নিয়ে এসেছে। জাদুকর মূর্তির টুকরো গুলো সাজিয়ে তুলতে লাগল। একটার ওপর আরেকটা বসাতেই জোড়া লেগে যাচ্ছে যেন কখনো ভাঙ্গেনি। অবশেষে শেষ টুকরোটা খুঁজে পেল সে। তারপর শেষ টুকরোটা জোড়া লেগে যেতেই জাদুকর হাসি মুখে তাকাবে মেয়েটার দিকে। কিন্তু বিস্মিত জাদুকরের চোখের সামনেই সেই মেয়েটি মিলিয়ে গেল মূর্তিতে।

কোথায় মূর্তি কোথায় মন্দির! সবকিছু যেন জাদুর মত উবে গেছে। জাদুকর এবার নিজেকে আবিষ্কার করল সে দাঁড়িয়ে আছে একটা খোলা জায়গায়। নীল আকাশের নিচে আর সামনে তাকিয়ে দেখবে আশেপাশে কিছু ঘরবাড়ি একেবারে তার পরিচিত শহরের মতই। সে একটা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। শুনতে পেল পেছন থেকে কেউ একজন ডাকছে তাকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে সে দেখল আর তার স্ত্রী তাকে ডাকছে, বলছে,
– এই রোদে এভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না। রান্না হয়ে গেছে। খেতে চলো।
জাদুকর হাত বাড়িয়ে তার স্ত্রীর হাত দুটো ধরল তারপর ধীরে হাত দুটো তুলে, চুমু দিল হাতে। জাদুকরের স্ত্রী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে বুঝতে পারছেনা কি হয়েছে। আর জাদুকর মুখে তাকাল তার স্ত্রীর দিকে ঠোঁটে মৃদু হাসি। ভালবাসার চেয়ে বড় আর কি জাদু আছে কারও জীবনে।

আরও পড়তে পারেন জহির আশফাক’র কবিতা ‘আফিম সংসার’


শর্টলিংকঃ