নুসরাতের শ্লীলতাহানি: অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনামুলের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত


আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানির মামলার পর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকেএম এনামুল করিমের বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান এ অভিযোগ তদন্তে সোনাগাজীতে আসেন।

এদিন তিনি নুসরাতের বাবা একেএম মূছা, মা শিরিন আক্তার এবং বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরিদর্শন এবং প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোছাইনসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।

পিকেএম এনামুল করিম সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি। গত ২০ এপ্রিল নুসরাতকে হত্যা এবং অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি ও শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে জেনেও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে মাদ্রাসাটির পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

গত ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (বর্তমানে বরখাস্ত) সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আদালত সিরাজকে কারাগারে পাঠায়।

এরই ধারাবাহিকতায় ৪ এপ্রিল নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা চেয়ে নুসরাতসহ তার পরিবারের সদস্যরা পিকেএম এনামুল করিমের সঙ্গে দেখা করেন। তখন তারা দুর্ব্যবহারের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গত ১৫ জুলাই বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এনামুল করিমের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।

একই সঙ্গে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পরে তদন্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এনামুল করিমের নিষ্ক্রিয়তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজিপি, ফেনীর জেলা প্রশাসক, ফেনীর পুলিশ সুপার, সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

পিকেএম এনামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ৪ এপ্রিল নুসরাতের শ্লীলতাহানি মামলার পর নুসরাতকে সঙ্গে নিয়ে এনামুল করিমের কাছে গিয়ে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা চাই।

তিনি তখন আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলেন, এখন কেন এসেছেন, মামলা করার আগে কেন আসেননি। অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা জামিন পাওয়ার পর আপনাদের বিরুদ্ধে উল্টো মানহানির মামলা করবে। বাড়াবাড়ি করবেন না, সবকিছু হজম করে ফেলেন।’

তারা এসব ঘটনার কথা তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানান নুসরাতের ভাই।

শ্লীলতাহানি মামলার পর অধ্যক্ষ ও তার অনুসারীদের রোষানলে পড়ে নুসরাত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ এপ্রিল সকালে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে নুসরাতের গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় মুখোশধারী কয়েকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ার পর মৃত্যু হয় তার।


শর্টলিংকঃ