নেশা করতে বিশ্বকাপ মেডেল বিক্রি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের


ইউএনভি ডেস্ক:

‘সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত আমাকে কোকেন নিতেই হতো।’- নিজের ড্রাগ আসক্তির কথা এভাবেই স্বীকার করলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ফ্লাভিও দোনিজেত। ব্রাজিলিয়ান এই প্রতিভাবান সেন্টার ব্যাক ফুটবলার শুধু নেশার টাকা জোগাতে একসময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সম্ভব সব বিক্রি করতে থাকেন। নিজের কাছে স্মরণীয় স্মৃতি স্মারক হিসেবে ছিল ক্লাব বিশ্বকাপে জেতা এক স্বর্ণের মেডেল। সেটাও বিক্রি করে দেন শেষ পর্যন্ত।

ব্রাজিল জাতীয় দলে খেলা না হলেও ক্লাব ফুটবলে ভালোই নামডাক ছিল ফ্লাভিও দোনিজেতের। ক্যারিয়ারের শুর থেকেই খেলতেন সাও পাওলোর হয়ে। দলটির হয়ে পালিস্তা স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু করে কোপা লিবারতাদোসের ও ক্লাব বিশ্বকাপও জিতেছেন তিনি।

২০০৫ সালে ক্লাব বিশ্বকাপের আগে লিওনার্দো বনফিমের চোটে বদলি হিসেবে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন দোনিজেত। আর সেবারই জিতেন ক্লাব বিশ্বকাপ। জয়ের পর সাও পাওলোর অন্য সদস্যদের মতো স্মারক মেডেল পেয়েছিলেন তিনিও।

কিন্তু ততদিনে নেশার জগতে বেশ ভালোই হাত পাকিয়ে ফেলছেন দোনিজেত। আর তাই তাঁর কাছে তখন ওই মেডেলটা ছিল কেবলই টাকার মূল্য।

নিজ দেশে ‘গ্লোবস্পোর্ট’ কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে অন্ধকার সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দোনিজেত বলেন, ‘কোকেনে যখন আমি আসক্ত হয়ে পড়লাম, সবকিছুই গেল। শুরুর দিকে আমি টুকটাক নেশা করতাম। এরপর সেটাই আমার জীবনে সব হয়ে গেল, যা ছিল সবই হারিয়ে ফেললাম। যা টাকা জমাতাম, সব দিয়ে ড্রাগস কিনতাম। এটা ছাড়া আমি থাকতেই পারতাম না।’

ক্লাব বিশ্বকাপের সে মেডেল বিক্রি করে দেওয়া প্রসঙ্গে দোনিজেত আরও যোগ করেন, ‘ড্রাগস কেনার জন্য আমি ক্লাব বিশ্বকাপের মেডেলও বিক্রি করে দিয়েছিলাম। ৭ হাজার রিয়েসে (ব্রাজিলিয়ান মুদ্রা, ৩ হাজার ৫০০ ডলার) সেটা বিক্রি করি।’

‘যে টাকা পেয়েছিলাম, তার প্রায় পুরোটা দিয়ে কোকেন কিনে ফেলি। প্রথম ডেলিভারি নিয়েছিলাম ১ হাজার রিয়েসের কোকেন। দুইদিনেই সেটা শেষ করে ফেলি। যত টাকা পেতাম, ততই ড্রাগ চাইতাম আমি।’

কোকেনের নেশায় আসক্ত হয়ে ২০০৯ সালে ফুটবলও ছেড়ে দিয়েছেন দোনিজেত। এ নিয়ে বলেন, ‘আমি নেশা করার সময়ে কখনো বাসায় থাকতাম না। শুধু পার্টি আর মদ নিয়ে পড়ে থাকতাম। এমন সময় ছিল যখন একটি দিনও আমার কোকেন ছাড়া কাটেনি। এটা নেওয়ার ফলে আমি মুটিয়ে যাচ্ছিলাম। হাঁটুর চোটে পড়ি, দৌড়তে পারতাম না। তখন বলেছিলাম, সব শেষ, আমি চিরতরে ফুটবলকে বিদায় বললাম।’

তবে সেই দুর্দিন ছেড়ে এখন আলোর পথে দোনিজেত। এর জন্য সব কৃতিত্ব পরিবারকে দেন এই ব্রাজিলিয়ান। অমন খারাপ সময় সবকিছু তাকে ছেড়ে গেলেও পরিবার পাশে ছিল। এখন ভালো সময়েও আছে জানিয়ে দোনিজেত বলেন, ‘খেলা থেকে আমার অ্যাকাউন্টে যত টাকা আসতো, সবই চলে যেত। আমি সবকিছুই হারিয়েছি। শুধু আমার স্ত্রী, কন্যা আর পরিবার ছাড়া। তারা এখনও আমার সঙ্গে আছে।’

৩৬ বছর বয়সী দোনিজেত এখন নেশা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ছয় বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে আবার ফুটবলে ফেরেন তাবাও দি সেরা ক্লাবে যোগ দিয়ে। ২০১৯ সালে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পর্তুগিসাতে যোগ দেন। এখনও আছেন সেই ক্লাবে।

আরও পড়তে পারেন  যে পাঁচ ধরনের মানুষ করোনাভাইরাসে বেশি মারা যায়


শর্টলিংকঃ