পদ্মাপাড়ে রাসিক’র নামে গ্যারেজ খুলে বেপরোয়া চাঁদাবাজি


বিশেষ প্রতিবেদক : 

রাজশাহী নগরীর বড়কুঠিতে পদ্মাপাড়ে সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে গ্যারেজ খুলে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। বিনোদনপিয়াসী শত শত মানুষকে জিম্মি করে এই গ্যারেজে মোটরসাইকেল রাখতে বাধ্য করে আদায় করা হচ্ছে টাকা।এভাবেই মাসে অন্তত দুই লাখ টাকা তোলা হয়।  অথচ সিটি কর্পোরেশন বলছে,  তারা কোনো গ্যারেজ ইজারা দেয় নি। এই গ্যারেজ অবৈধ

ইচ্ছেমতো স্লিপ ছাপিয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা

জানা গেছে, বিনোদনপ্রেমী ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর রাজশাহী মহানগরীর বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে উন্মুক্ত ওয়াইফাই জোন চালু করেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এর আগে পদ্মাপাড়ে মাটি ভরাট করে দৃষ্টিনন্দন টাইলস বসানো হয়। লাগানো হয় বাহারি গাছও। ফলে কেবল নগরবাসীই নন, বাইরে থেকে আসা বহু মানুষও পদ্মা দেখতে এখানেই জড়ো হন। এই জায়গাটিকে ঘিরে এখন বসেছে ব্যক্তি মালিকানার বেশ কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকানও। ফলে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে সময় কাটতে যান।

এ ওয়াইফাই জোন প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকত।দুই হাজার মিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে যেদিকে যাওয়া যাবে, সেখানেই এর সংযোগ মিলত। সেখানে ২০০ ব্যবহারকারী একসঙ্গে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারতেন। একারণেও এই জায়গাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ যাতায়াত শুরু করেন। কিন্তু ২০১৩ সালের নভেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় এ ওয়াইফাই জোন।

সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দখলে নিয়ে করা হয়েছে গ্যারেজ। শুক্রবার সন্ধ্যার ছবি

কিন্তু এই জায়গার আবেদন ফুরিয়ে যায় নি। বরং দিন দিন মানুষ এখানে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। টাইলস বাঁধানো সিঁড়ি ও বেদীতে বসে উপভোগ করেন সৌন্দর্য। বেশির ভাগই যান পরিবার নিয়ে। এদের মধ্যে অনেকেই নিয়ে যান মোটরসাইকেলও। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের টাইলস বসানো কফিবার রেস্টুরেন্টের সামনের অন্তত ৫০০ ফুট দীর্ঘ জায়গা দখলে নিয়ে গ্যারেজ করেছে স্থানীয় শান্ত নামে একব্যক্তি।  পদ্মাপাড়ে যাওয়া সব মোটরসাইকেলই ওই গ্যারেজে রাখতে বাধ্য করা হয়। এজন্য আদায় করা হয় ১০টাকা করে। তবে যে কোনো বিশেষ দিন এলেই গুণতে হয় দ্বিগুণ টাকা। তাদের দেয়া স্লিপে ‘শান্ত’র স্বাক্ষরও রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পদ্মার ধারে কফিবার ফাস্টফুড দোকানের সামনের (বড়কুঠি) কতটুকু জায়গা গ্যারেজের জন্য তাও চিহ্নিত করা নেই। সাইকেল ও মোটরসাইকেল প্রতি ইজারাদার কত টাকা আদায় করতে পারবেন তাও ভোক্তাদের জন্য টাঙানো নেই। তবে স্লিপে টাকার অংক বসিয়ে দেয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো। ‘বিশেষ দিনে’র নামে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। এই নৈরাজ্যের কারণে উন্মুক্ত এই বিনোদন কেন্দ্রে গিয়ে  হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এনিয়ে তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে।

কফিবারের পূর্বপাশও গ্যারেজের নামে দখল

রাজশাহীর পবা থেকে পদ্মাপাড়ে আসা আমিন বলেন,  ‘আমার মোটরসাইকেল গ্যারেজে রাখব না বলে কফিবারের পূর্বদিকে শেষ মাথায় গিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়েও গ্যারেজের নামে আমাকে ২০টাকার স্লিপ নিতে বাধ্য করা হয়। জানানো হয়, সিটি কর্পোরেশন থেকে এই জায়গা ইজারা নিয়েছে শান্ত । তিনি স্লিপ ছাপিয়ে এই টাকা তুলছেন। ওরা এমনভাবে বাইকের সামনে এসে দাঁড়ায় মনে হয় বাইকটাসহ দিলেও ওদের প্রাণ ভরবে না’।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মোটরসাইকেল বা সাইকেল নিয়ে ভেতরে ঢুকলেই বলে টিকিট নেন।তারা জানারও চেষ্টা করে না, গাড়ি রাখবো নাকি চলে যাবো’। আসাদ উচ্ছ্বাস জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা গ্যারেজের নামে প্রতি মোটরসাইকেলে ২০টাকা করে আদায় করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শরিফুল ইসলাম সুমন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশেনের নামে এই চাঁদাবাজি চলছে। অথচ কোনো খবরই রাখেনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।

 

 

গ্যারেজের নামে টাকা আদায়ের স্লিপ

গ্যারেজের মালিক শান্ত’র দাবি এখানে তাদেরও জমি রয়েছে। তাই নিজেরাই গ্যারেজ করেছেন। তারা মোটরসাইকেলের নিরাপত্তার জন্য গ্যারেজে রেখে বিনিময়ে টাকা নেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, ‘ওই জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন। কিন্তু ডেভেলপ করেছে সিটি কর্পোরেশন। এখানের কোনো জায়গা গ্যারেজের জন্য কর্পোরেশন ইজারা দেয় নি কাউকে। এই গ্যারেজটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

 


শর্টলিংকঃ