পদ্মা-গড়াইয়ের সংসারে কবে আসবে নতুন অতিথি?


নিজস্ব প্রতিবেদক: 

বংশ বাড়াতে ২০১৭ সালে দুটি ঘড়িয়ালের  জুটি  একত্রে রাখা হয় রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার পুকুরে। এরপর দেড় বছর কেটে গেল। তাদের প্রেম হয় তো জমে ওঠে নি। কারণ  কোনো সুখবর নেই আপাতত।  তবে এ মৌসুমেই তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসতে পারে-এমন আশায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সংসার পেতেছে পদ্মা ও গড়াই

শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ফরহাদ উদ্দিন জানান,  এখানে আগে থেকে একটি নারী ঘড়িয়াল ছিল।  কিন্তু তার কোনো সঙ্গী ছিল না। তবে  ২০১৭ সালের আগস্টে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল  ট্রাকে করে বিশেষ ব্যবস্থায়  চিড়িয়াখানায় আনা হয়। এরপর  নারী ঘড়িয়ালটির সাথে তাকে পুকুরে অবমুক্ত করা হয়। পুরুষটি নাম গড়াই ও নারীটি নাম দেয়া হয়েছে পদ্মা।

ডা. ফারহাদ বলছেন, ঘড়িয়াল বাংলাদেশে একটি বিপন্ন প্রাণী। দিনে দিনে এদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। বর্তমান সময়ে দেশে ঘড়িয়াল দেখা ভার। রাজশাহী চিড়িয়াখানায় দু’টি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল। যাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর হবে। সেই সময় পদ্মা নদীতে মাছ মারতে গিয়ে জেলেদের জালে আটকা পড়েছিল ঘড়িয়ালগুলো। জেলেরা সেগুলো ধরে চিড়িয়াখানায় দিয়েছিল। অপরদিকে ঢাকা চিড়িয়াখানায় যে কয়টি ঘড়িয়াল আছে সবগুলোই পুরুষ। সে কারণে ঘড়িয়ালের প্রজনন করানো সম্ভব হচ্ছিল না।

চিড়িয়াখানার এ পুকুরেই পদ্মা-গড়াইয়ের সংসার

তাই দুই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বিপন্ন প্রাণীটির প্রজনন বৃদ্ধি করতে ঘড়িয়াল বিনিময়ের উদ্যোগ নেয়। এতে বংশ বিস্তার করতে পারবে প্রাণীটি। এজন্যই ঢাকা থেকে রাজশাহীতে একটি পুরুষ ও রাজশাহী থেকে ঢাকায় একটি নারি ঘড়িয়াল স্থানান্তর করা হয়েছে। রাজশাহীর নারী ঘড়িয়ালটি ঢাকা চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয়।

ডা. ফারহাদ বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঘড়িয়ালদের প্রজনন মৌসুম। একবার প্রজননে ৩৫ থেকে ৪০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে তারা। সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে তারা ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর তারা গর্ত খুড়ে ডিম ঢেকে রাখে। সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে সময় নেয় ৭০ থেকে ৯০ দিন।

শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানার প্রধান ফটক

তাই ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ এর সংসারে নতুন অতিথি আসুক সেই আয়োজনে এখনও ব্যস্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তাদের প্রস্তুতিরও কমতি নেই। যে পুকুরে এই যুগলের বাস, সেটি তাদের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে। ঘড়িয়াল ডিম দেয়ার পর তা গর্ত করে ঢেকে রাখে। এই সুবিধা নিশ্চিত করতে মাঝ পুকুরে বালির ঢিবি তৈরি করা হয়েছে।

এই যুগলের দেখভালে নিয়োজিত চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানিয়েছেন, একই পুকুরে থাকলেও দীর্ঘদিন এরা আলাদা ছিল। শঙ্কা ছিল সংসারে বিবাদ বাধে কিনা। এই শঙ্কা থেকে তাদের খাবার দেয়া হত আলাদা। তবে ধীরে ধীরে এই দূরত্ব কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন এরা একসঙ্গেই খাবার খায়। তাদের মধ্যে মিলনও দেখা গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই মৌসুমে ডিম দেবে ‘পদ্মা’।  পদ্মা’র বয়স ৪০ হয়ে গেছে। ‘গড়াই’ও প্রাপ্ত বয়স্ক। কিন্তু দীর্ঘদিন ‘যুগল আবাস’ পায়নি এরা। এছাড়া,  গঠনগত কিছু ভিন্নতাও রয়েছে। ফলে তাদের ঘনিষ্ট হতে এই সময় লেগেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই মৌসুমেই নতুন অতিথি আসবে ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ এর সংসারে।

আরও পড়ুন: অর্ধশতাব্দী পরও মন কাড়ে প্যারিস রোড

 


শর্টলিংকঃ