Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

পদ্মা সেতুতে প্রস্তুত রেললাইন, পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে আজ 


ইউএনভি ডেস্ক:

খরস্রোতা পদ্মা নদীতে নির্মিত সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে আজ মঙ্গলবার। এর মাধ্যমে পূরণ হবে আরেকটি স্বপ্ন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন নির্মিত রেলপথে প্রথমে যাবে একটি গ্যাং কার। সেটির পিছু পিছু যাবে চীন থেকে সদ্য কেনা বগিতে তৈরি একটি যাত্রীবাহী ট্রেন।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় একটি গ্যাং কার (পরিদর্শন ট্রেন) ভাঙ্গা থেকে মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করবে। এর পর ছয় বগির একটি ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়ায় যাবে।

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ট্রেনে যাত্রী হবেন। ট্রেনটি আবার সেতু পার হয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশনে ফিরবে।

গত বছরের ২৫ জুন দ্বিতল পদ্মা সেতুর আপার ডেকে (ওপরতলা) যান চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২০ আগস্ট ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেকে (নিচতলা) রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্নের লক্ষ্য ছিল। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, ৩১ মার্চ সেতুতে স্লিপার ঢালাইয়ের মাধ্যমে ব্যালাস্টলেস (পাথরবিহীন) রেললাইন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া, পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে চায় রেলওয়ে। রেলমন্ত্রী যদিও একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছিলেন– জুনেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। তবে প্রকল্প সূত্রের ভাষ্য, আগামী ডিসেম্বরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে চলবে ট্রেন।
সরকারের অগ্রাধিকারের পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় চীনের ঋণে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল লাইনসহ ২১৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর– এই তিন ভাগে প্রকল্পের কাজ চলছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭২ শতাংশ এবং মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি প্রায় ৯৩ শতাংশ। ভাঙ্গা-যশোর সেকশনে কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজ পরিকল্পনার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে। আরও পাঁচ-ছয় মাস লাগতে পারে। এ বছরেই ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে ট্রেন চলবে। আগামী বছরের জুনে যশোর পর্যন্ত যাবে রেল।

ভাঙ্গা জংশন থেকে পদ্মা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত নবনির্মিত ৩২ কিলোমিটার রেলপথে আগেও পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছে। তবে আজই প্রথমবারের মতো সেতু পার হবে ট্রেন। পরীক্ষামূলক চলাচল অব্যাহত থাকবে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলে সক্ষম পদ্মা সেতুর রেল ট্র্যাক। প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলক যাত্রায় এত গতিতে চলবে না ট্রেন। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। ঢালাইকৃত রেলপথের বিভিন্ন অংশের ল্যাব পরীক্ষায় ফাটল বা সমস্যা পাওয়া যায়নি। পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

পদ্মা সেতুর মতো কারিগরি বাধায় পড়েছিল রেললাইন স্থাপনের কাজও। সেতুর ওপরতলায় গাড়ি চলাচলের কারণে সৃষ্ট কম্পনে রেললাইন স্থাপনের কাজ বিঘ্নিত হবে কিনা– এটি যাচাই-বাছাইয়েও দুই মাস লেগে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মালপত্র আমদানিতেও সমস্যা হয়। শেষ স্লিপারটি আকাশপথে চীন থেকে দেশে আনা হয়। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার হলেও পাথরবিহীন রেলপথ বসানো হয়েছে ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুতে রেললাইন সাতটি অংশে বিভক্ত। সেতু টেকসই রাখতে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে বিভাজন রাখা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো রেল ব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা সেতুতে। দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের সময় এ সংযোগ ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারবে। পুরো সেতুতে ১০ হাজার ৭৯০টি স্লিপার বসানো হয়েছে।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমাবে। বর্তমানে ঢাকা থেকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ঘুরে দক্ষিণবঙ্গে যায় ট্রেন। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালুর পর রাজশাহীর ট্রেনও স্বল্প সময়ে এই পথে ঢাকা থেকে যেতে পারবে। মোংলা বন্দর রেলপথে সরাসরি যুক্ত হবে রাজধানীর সঙ্গে।
এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের যানজটে পড়তে হয় রাজধানীর বাবুবাজার ও পোস্তগোলা সেতুতে। ট্রেন চালুর পর যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার যানজট থেকে মুক্তি পাবেন দক্ষিণের যাত্রীরা। শুধু দ্রুত ঢাকায় যাতায়াত নয়; পণ্যও পাঠানো যাবে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে জীবিকা হারিয়েছেন মাওয়া এবং জাজিরা এলাকার নৌঘাটের বহু শ্রমিক। রেলপথ-সংলগ্ন লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ও মেদিনীমণ্ডল এলাকার বাসিন্দারা জানান, ট্রেন চলাচল শুরু হলে স্টেশনকেন্দ্রিক জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্থানীয় আবুল কালাম বলেন, ঘাট বন্ধ হওয়ায় শত শত মানুষ বেকার। রেলস্টেশন চালুর আশায় আছেন তাঁরা।শিবচরের ব্যবসায়ী আবু জাফর বলেন, বাসে ভাড়া বেশি। ট্রেনে কম খরচে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করা যাবে।


Exit mobile version