রাজশাহীতে পাখির বাসার জন্য ১০বিঘা জমি অধিগ্রহণের নির্দেশ


আমানুল হক আমান, বাঘা :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসার আমবাগানের সেই পাখির স্থায়ী আবাসনের জন্য আমবাগানসহ অন্তত ১০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  শিগগিরই এই জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।


মুক্তমনে কয়েক’শ বাচ্চা নিয়ে নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজারো শামুকখোল পাখি। আনন্দঘন পরিবেশ আর পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে, বদলে গেছে গ্রামটির নাম। নতুন করে পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রাম। পাখিদের পরিচয়ে সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের নাম। গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এই বাগানে বাসা বেঁধে আছে। এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়। তবে এখন প্রায় সারা বছরই থাকে। এখন সেই পাখি সুরক্ষায় দায়িত্ব নিচ্ছে সরকার।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, গত ৫ নভেম্বর বাগানে পাখির বাসা রাখার জন্য বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বাগান মালিককে দেয়ার জন্য বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে এই প্রস্তাব জানানো হয়েছে।

পাখির বাসা ভাড়ার বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বাগান মালিককে দেয়ার প্রস্তাব পাঠানোর পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব পাখিদের জন্য স্থায়ীভাবে আমবাগানটি অধিগ্রহণের জন্য পাল্টা প্রস্তাব দেন। জেলা প্রশাসক বলেন, স্থায়ী অভয়ারণ্য করা গেলে পাখিরা আর অন্য কোথাও যাবে না। পাখিদের স্থায়ী আবাস তৈরি করা হলে তাদের কেউ বিরক্তও করবে না। এজন্য প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে।

এর আগে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বাগানে গিয়ে জরিপ করে দেখেছেন ৩৮টি আমগাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছে। তাঁরা এই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাগান মালিককে বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এই পাখিরা প্রতি বছর একই গাছে বাসা বাঁধে না। চার বছর আগে এই গ্রামের আমবাগানে এসেছে। আগামী বছর আবার অন্য কোথাও চলে যেতে পারে। এ জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করা ঠিক হবে কি না সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত। এর আগে বাঘার পার্শ্ববর্তী উপজেলার আমবাগানে বাসা বেঁধেছিল বলে জানান এই কর্মকর্তা।

স্থানীয়রা জানান. হঠাৎ করেই আম ব্যবসায়ী বাগান পরিচর্যা করতে গিয়ে কয়েকটি আমগাছের পাখীর বাসা ভেঙ্গে দেওয়ার পর হুমকির মুখে পড়ে হাজারো শামুকখোল পাখি। স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পড়ে কয়েক দিনের সময় বেঁধে দেন আম ব্যবসায়ী। গনমাধ্যমে প্রকাশিত হলে গত ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়ের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকাকে কেন অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে না- তা জানাতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পাখির বাসাগুলো ভাঙা যাবে না বলে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ক্ষতির পরিমান জানতে চেয়ে চল্লিশ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয় ।


শর্টলিংকঃ