Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

পাবনার সিজিএম এ ১ বছরে ৬৮৯৬ টি মামলা নিস্পত্তি : বিচারাঙ্গণে অনন্য নজির স্থাপন 


কলিট তালুকদার,পাবনা:

‘বিচারের দীর্ঘসুত্রিতা মানেই বিচারহীনতা’ এ কথা মাথায় রেখে তরিৎ স্বাক্ষী গ্রহণের মাধ্যমে পাবনায় বিচারকার্য সম্পন্ন করা হচ্ছে। ফলে বদলে গেছে পাবনার বিচার বিভাগের চিত্র।

বিচারকের বিচক্ষণতা ও দক্ষতায় গত এক বছরে পাবনার আমলি আদালত সমুহে ৬৮৯৬ টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ১ হাজার ৭২৯ টি বেশী।

পাবনার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেহ্ মোঃ সালাহ্উদ্দিন খাঁর ব্যাক্তিগত প্রচেষ্ঠার ফলে জেলার বিচারাঙ্গণে এই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে সবাই অভিমত প্রকাশ করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, পাবনার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬৮৯৬ টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। এই বছরে ১৫২১৩ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

সবচেয়ে খুশির বিষয় এই যে, এ সময় ১০৯২ টি মাদক মামলা নিস্পত্তি এবং নানা অভিযোগে ১৮৭৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়। বর্তমানে পাবনার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীন আমলি আদালত গুলোতে ১৪৫৬৪ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

সুত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পাবনার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৫১৬৭টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। ঐ বছরে ৭৭০৯ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ঐ সময় ২৪২টি মাদক মামলা নিস্পত্তি, এবং বিভিন্ন অভিযোগে ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড দেওয়া হয়। ঐ বছর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৪৮৭২ টি।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে দায়ের এবং ২০১৮ সালেই সাক্ষীর মাধ্যমে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ৪৬৭টি। গত বছরে বা ২০১৫ সাল বা তার আগের নিষ্পত্তিকৃত পুরান মামলার সংখ্যা ১০৫৮টি।

কয়েকজন বিচারপ্রার্থী বাদী ও বিবাদীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, বর্তমানে পাবনার বিচার বিভাগের অনেক উন্নতি ও বেশ পরিবর্তন হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে বিচার কাজ শেষ হলে আদালতে বার বার আসতে হয় না। এতে কাজের ক্ষতি হয় না। অর্থ এবং সময় উভই বাঁচে।

এ ব্যাপারে চীফ জুডিসিয়ল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোঃ সালাহউদ্দিন খাঁ বলেন, পাবনার পুলিশ প্রশাসন ও আইনজীবীদের আন্তরীক সহযোগিতায় ম্যাজিষ্ট্রেসির বিজ্ঞ বিচারকগনের অকান্ত পরিশ্রম করায় এই অভাবনীয় সফলতা অর্জিত হয়েছে। ফলে বিচার নিস্পতির এই উর্ধমুখী চিত্র।আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবনার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোঃ সালাহউদ্দিন খাঁ প্রতিদিন এজলাসে উঠে প্রথমে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২৮ ধারা প্রয়োগ করে রাষ্ট্র পক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষীদের সমহারে প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বন্টনের মাধ্যমে সমন্বয় করেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রত্যেক আদালতের পেশকারদের নিকট থেকে রাষ্ট্র পক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষীর তালিকা পূর্বে সংগ্রহ করেন এবং এজলাসে বসে তৎক্ষনাৎ প্রস্তুতকৃত ফরমেটেড আদেশের মাধ্যমে প্রয়োজন হলে মামলা স্থানান্তর করেন।

এ ছাড়া হাতে না লিখে এজলাসে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে উপস্থাপিত সকল সাক্ষীদের সাক্ষ্য ম্যাজিষ্ট্রেটগনের দ্বারা গ্রহনের ব্যবস্থা করেন। ইতোপুর্বে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে পাবনা পুলিশ সুপারের সাথে সভা করে সাক্ষী উপস্থিত করা সহ মামলা নিষ্পত্তির কার্যপন্থা নির্ধারণ করেন। যে সব নতুন মামলার সরকারী সাক্ষী পাবনাতেই আছে সেসব মামলার তারিখ ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর প্রদান করার জন্য বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগনকে নির্দেশনা দেন।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করায় মাদক মামলা নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দেন। গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডাক্তার সাক্ষীদের হাজিরার জন্য স্টেনোর মাধ্যমে মেসেঞ্জার, ইমো, ভাইভার, হোয়াটস আপ ইত্যাদির সাহায্যে ম্যাসেজ পাঠনোর ব্যবস্থা করেন। একই আইও সাক্ষী বা ডাক্তার সাক্ষীর মামলার তালিকা করে তাদের মামলাগুলো যতদুর সম্ভব একই তারিখে প্রস্তুত রাখেন।

সপ্তাহে একদিন সাপ্তাহিক প্রতিবেদন (উইকলি ষ্টেটমেন্ট) সহ সিজেএম আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগনদের নিয়ে বৈঠক করেন। ফলে সিজেএম আদালতের বিচারিক কাজে ব্যাপক গতি আসে। ১৬৪ ধারায় আসামীর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করতে না হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটগনকে এ জন্য অফিস সময়ের অধিক বিচারিক কাজও করতে হয়না।

এ ব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস (পুলিশ সুপার পদে পদন্নোতিপ্রাপ্ত) বলেন, বিচার নিস্পত্তির ক্ষেত্রে পাবনার বিচার বিভাগ অনন্য নজির স্থাপন করেছে। পাবনার বিচার বিভাগ এবং পুলিশ প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মধ্যে পাবনার জুডিশিয়ালে একটি নিউ মডেল তৈরী করেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থায় পাবনা জেলার এই চিত্র দৃষ্টান্ত স্বরূপ। যার মূখ্য ভূমিকায় আছেন বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ্ মোঃ সালাহ্উদ্দিন খাঁ, সাবেক পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর এবং বর্তমান পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম পটল বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এ রকম কাজই দরকার। যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। মামলার বিচার যত দ্রুত সম্পন্ন হয় তত ঘাপলা কম হয়। আলামত নস্ট হয় না। বাদী ও বিবাদী উভয়ই সু বিচার পায়। সারা দেশের মধ্যে পাবনায় বিচার বিভাগে যে মডেল তৈরী করা হয়েছে তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারকগণসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ ইকবাল লিটন বলেন, বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সালেহ্ মোঃ সালাহ্উদ্দিন খাঁ এর সততা এবং আন্তরিক প্রচেস্টার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে।


Exit mobile version