Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

পুঠিয়ার ওসি: আটকবাণিজ্য, যৌনকর্মীর ফাঁদ পেতে ঘুষ গ্রহণ


পুঠিয়া প্রতিনিধি: 

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি সাকিল উদ্দীন আহম্মদকে প্রত্যাহার করার পর তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে উঠেছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রত্যাহার হওয়া ওসির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের মধ্যে যৌনকর্মীর ফাঁদ পেতে ঘুষ গ্রহণ করেছেন এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি  বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন সাংসদ সদস্যের ভাই হওয়ার সুবাদে এলাকায় সর্বময়ী ক্ষমতার অধিকারী হিসাবে নিজেকে জাহির করতেন। টাকা ছাড়া থানায় কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি ভূক্ত হতো না। তিনি বিভিন্ন অভিযোগে আসামী পক্ষের সাথে বিশেষ সমঝোতা করে বাদী পক্ষকে জিম্মি করে তার কার্যালয় ( সালিশ ঘর) হিসাবে গড়ে তুলে ছিলেন।

মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হত্যা মামলার আসামী পর্যন্ত সবই তার অনুসারী হিসাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াত। সম্প্রতি শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলের অভিযোগে হাইকোট তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মতিহার থানার কাঁটাখালি পৌর এলাকার সাথী বেগম নামের (ছদ্দনাম) এক যৌনকর্মী বলেন, ওসি সাকিলের সহায়তায় পুঠিয়া উপজেলার চিহ্নিত ব্যবসায়ী ও উচ্চ পদে চাকুরীজীবীদের টার্গেট করে বর্তমানে ৬  জন যৌনকর্মী বিভিন্ন বাসা-বাড়ীতে রয়েছে। এর মধ্যে বেলপুকুরে ২জন, বানেশ্বর বাজারে ২জন ও পুঠিয়া সদর এলাকায় দু’জন অবস্থান করছে। আর ওই যৌনকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে রয়েছে পুলিশ সোর্স নামধারী একাধিক এজেন্ট।

তিনি আরও জানান, সোর্সদের কাজ হচ্ছে কৌশলে বিভিন্ন লোকজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা। এরপর তাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে বাসায় ডেকে আনা হয়। এর মধ্যে বিষয়টি ওসিকে অবহিত করা হয়। টার্গেটকৃত ব্যাক্তি বাসায় আসলে কিছুক্ষনের মধ্যে ওসি নিজে অথবা তার মতদর্শী কোনো পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর হাতকড়া পরিয়ে চলে দর কষাকষি। ষড়যন্ত্রের শিকার লোকজন মানসম্মানের ভয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিয়ে চলে আসেন। আর ওই টাকা ওসি ও আমরা অর্ধেক করে নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, গত ২৬ মে আমাদের এলাকার দু’জন ছেলে-মেয়ে রাতের আধারে অসামাজিক কাজের লিপ্ত হওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হয়। ওই রাতে ওসির নির্দেশে পুলিশ এসে এলাকায় তান্ডব শুরু করেন। এতে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ জানালে পুলিশ ও স্থানীয় যুবকদের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এ ঘটনায় এলাকার চেয়ারম্যানসহ পুলিশ বাদী হয়ে ৪ জনের নামে ও আরো ১৫/২০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে ওসি নিজে এলাকার লোকজনদের আটকের হুমকি দিতে থাকেন। তিনি প্রকাশ্যে আমাদের বলেছেন, আটক এড়াতে জনপ্রতি দু’লাখ টাকা নেবেন। আর মামলা থেকে নাম কাটাতে তিন লাখ নেবেন। পুলিশের হয়রানী মূলক মামলা এড়াতে ৫/৬ জন ওসির সাথে সমঝোতা করে বাড়িতে থাকেন। আর যারা ওসির সাথে সমঝোতা করেননি তারা এখনো এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার একজন উপ-পরিদর্শক বলেন, ওসি সাকিল উদ্দীন পুঠিয়া থানায় যোগদান করার পর থেকে এলাকায় টাউট-বাটপারদের কথিত পুলিশ সোর্স পরিচয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে ছিলেন। কয়েকটি স্থানে অসামাজিক কাজে সহয়তা ও আটক বানিজ্যসহ চিহ্নিত অনেক মাদক ব্যবসায়ীর সাথে ছিল তার সুসম্পর্ক।

এলাকার সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি তিনি থানার সকল স্টাফদের প্রায় কোণঠাসা করে রাখতেন। এ ব্যাপারে সদ্য পুলিশ লাইনে প্রত্যাহারকৃত ওসি সাকিল উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


Exit mobile version