পুঠিয়ায় বর্ষা মৌসুমেও পুকুর খননের হিড়িক!


আবু হাসাদ কামাল পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বর্ষা মৌসুমেও এক শ্রেণীর মৎস্য ব্যবসায়িদের মধ্যে পুকুর খননের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সম্প্রতি কিছু পুকুর খননকারীরা হাইকোর্টের আদেশ এনেছেন। আবার কেউ হাইকোর্টের ভূয়া কাগজ দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে রাতারাতি পুকুর খনন করছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছেন, যে হারে পুকুর খনন করা হচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফসলী জমির পরিমান অর্ধেকেরও কম হয়ে যাবে। উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জনস্বার্থে মহামান্য হাইকোর্টের ২৪৭৬/২০১৯ নম্বরে একটি রিট আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ১০/০৩/২০১৯ ইং কৃষি জমিতে পুকুর খনন না করতে আদেশ দেন।

পাশাপাশি কোথাও পুকুর খনন কাজ চললে উপজেলা প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন গত বছর ২৮ মার্চ স্বারক নং-০৫.৪৩.৮১৮২.০০০.১৬.০১৫.১৮-৩৬৫(১০) একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। অথচ গত মাসে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এলাকায় নতুন করে ১৮ টি পুকুর খনন করার আদেশ দেন মহামান্য হাইকোট। যা বর্তমানে খনন কাজ চলমান।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, মৎস্য ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কৃষকদের বেশী টাকার বাৎসরিক ইজারার লোভ দেখায়ে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি করেন। পরে ওই ফসলী জমিগুলোতে পুকুর খননের পূর্বে অনেকেই হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে আসছেন। আবার কিছু মৎস্য চাষিরা আদালতের ভূয়া কাগজ সংগ্রহ করে প্রভাবশালীদের সাথে বিশেষ চুক্তি করে রাতের আধারে একাধিক স্কেভেটারের মাধ্যমে পুকুর খনন করছে।

এলাকায় যত্রতত্র ভাবে পুকুর খনন করায় বছরের বেশীর ভাগ সময় বিলে পানি আবদ্ধ থাকে। এতে করে কৃষকদের প্রতিবছর শত শত বিঘা জমির ফসলহানী ঘটছে। শিলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল ও ভালুকগাছি ইউপি চেয়ারম্যান তাকবীর হাসান বলেন, পুকুরের মাটি বহনকারী গাড়ী গ্রামীন সড়ক গুলোতে দাপিয়ে চলছে। ওই গাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহনের কারণে রাস্তা গুলো ভেঙ্গে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে।

আবার সংস্কারকৃত রাস্তা গুলো বছর না ঘুরতে পূর্বের অবস্থানে ফিরছে। বিষয় গুলো উপজেলার মাসিক সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করেও এর কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভুঁইয়া বলেন, বর্তমানের আমদের এলাকায় তিন ফসলী জমিতে যে পরিমান পুকুর খনন হচ্ছে তাতে করে আগামীতে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে পুকুর খনন করতে এখনো অনেক গুলো আবেদপত্র রয়েছে। আমরা সরেজমিনে দেখেছি বেশীর ভাগ আবেদনকৃত জমি গুলো তিন ফসলী। যার কারণে ওই জমিতে পুকুর খনন করতে দেয়া যায় না। এরপর ওই আবেদনকারীরা হাইকোর্টে যাচ্ছেন। আর আদালত সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকার জরিপ না করেই পুকুর খনন করা যাবে এমন আদেশ দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, কিছু পুকুর খননে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। আর যারা অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আদালতের ভূয়া আদেশে পুকুর খনন করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই আদালতের আদেশ গুলো আমাদের অবহিত করছেন। আমরা সে গুলো অনলাইনে যাচাই-বাছাই করছি।


শর্টলিংকঃ