পুঠিয়ায় বেসরকারী স্বাস্থ্য সেবায় ভুয়া চিকিৎসকের ছড়াছড়ি


 আবু হাসাদ কামাল, পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠছে প্রায় একডজন ক্লিনিক ও অগনিত প্যাথলজি সেন্টার। এ গুলোর মধ্যে কোনো ক্লিনিকের নিজেস্ব চিকিৎসক ও প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সেবক সেবিকা নেই। দু’একটি প্যাথলজি সেন্টার বাদে কোনোটির প্রশিক্ষন প্রাপ্ত টেকনিশিয়ান নেই।

দু’একটি ক্লিনিকে শুধুমাত্র অপারেশনের জন্য ভাড়া করা ডাক্তার আনা হলেও তার মধ্যে বেশীর ভাগই ভূয়া। বাকিরা নিজেরাই ডাক্তার সেজে অপারেশন করছে। যার ফলে মাঝে মধ্যে রোগিরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। পাশাপাশি অনেক ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সরকারী তালিকাভূক্ত মোট ৮টি ক্লিনিক ও ছয়টি প্যাথলজি সেন্টার রয়েছে। তবে ওই তালিকার বাহিরে আরো ১১টি প্যাথলজি ও ২টি ক্লিনিক অবৈধ ভাবে কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুসারে একটি বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ১০টি বেডের জন্য সার্বক্ষনিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন প্রশিক্ষিত সেবিকা থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু পুঠিয়াতে কোনো ক্লিনিকের নিজেস্ব ডাক্তার নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলায় কোনো ক্লিনিকেই নিয়ম অনুসারে রোগিদের সেবা দেয়া হচ্ছে না। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী রোগিদের ক্ষেত্রে দু’একটি ক্লিনিক মালিক শুধুমাত্র অপারেশনের জন্য নামিদামি পরিচয়ে অদক্ষ চিকিৎসক ডেকে আনছেন। ক্লিনিক গুলোতে অপারেশন ও পরবর্তি চিকিৎসা সেবার জন্য বাস ড্রাইভার, সাইকেল মেকার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও কথিত মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান রয়েছে।

এদের মধ্যে কেউ চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নয়। আবার অনেকেই অল্প খরচের প্রতিশ্রতি দিয়ে নিজেরা ডাক্তার সেজে দেদারছে রোগিদের বিভিন্ন রকম অপারেশন করছে। আর গর্ভবতী নারীদের আল্টাসনোগ্রাম করছে কর্মরত আয়ারা। এদের মধ্যে একজন বিভিন্ন উপজেলার ক্লিনিক গুলোতে কখনো সহকারী সার্জন আবার অবসকারী চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিয়ে নিয়মিত অপারেশন করছে। তার অপচিকিৎসার কারণে জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ৫ রোগির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে প্যাথলজি গুলোতে চলছে আরো ভয়াভহ অনিয়ম। রোগিরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে গেলে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানদের ভূয়া সীল ব্যবহার করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে। অপরদিকে একাধিক ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার মালিকরা চিকিৎসার আড়ালে অবৈধ গর্ভপাত ও অসামাজিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এমন অভিযোগে একটি ক্লিনিকে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে হাতে-নাতে একডজন পতিতা আটক করে ক্লিনিকটি সীলগালা করা হয়। পরে ওই ক্লিনিক মালিক বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুনরায় ক্লিনিকটি চালু করে।

বর্তমানে পুঠিয়া সদর এলাকায় দু’টি ক্লিনিক ও তিনটি প্যাথলজি সেন্টারে দেহ ব্যবসা ও অবৈধ গর্ভপাত করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ক্লিনিক ও প্যাথলজি মালিকরা বলেন, আমাদের এখানে ভাড়া ডাক্তার দিয়ে শুধুমাত্র অপারেশন করানো হয়। বাকি কাজ গুলো ক্লিনিক মালিক ও তাদের নিয়োগকৃত লোকজন করে থাকেন। আর এতে মাঝে মধ্যে রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন।

অনেক সময় সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগী ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য বলেন, উপজেলার বে-সরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার বিষয় গুলো স্থানীয় প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন তদারকি করে। তবে রোগিদের সাথে কোনো প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এনামুল হক বলেন, উপজেলা গুলোতে এই সমস্যা দীর্ঘদিন থেকেই। তবে করোনা প্রভাবের কারণে আমরা ব্যস্ত। এই সুযোগে আরো তৎপর হয়েছে কিছু বে-সরকারী সেবা প্রতিষ্ঠান। তবে আমরা কোনো অভিযোগ পেলে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


শর্টলিংকঃ