সমঝোতায় সরকারী ৩ পুকুরে রাজাকার নাতির মাছচাষ


পুঠিয়া প্রতিনিধি:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় খাস ও ভিপি সম্পত্তির ৩টি পুকুর গোপন সমঝোতায় মাছ চাষ করছে স্থানীয় কুখ্যাত সাজাপ্রাপ্ত এক রাজাকারের নাতি। খাতা কলমে পুকুর গুলো মৎস্যজীবি সমিতির নামে লিজ দেখানো হলেও তার বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন।

এ ঘটনায় ওই লিজ বাতিল ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরিফুল হক রুবেল নামের একজন শিক্ষক এলাকাবাসীর পক্ষে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৮ফেব্রয়ারী এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা ১৪২৬ হতে ১৪২৮ সাল পর্যন্ত রাজপরগণার শিবচৌকি পুকুর পরিমান ৬.১৮ একর ৭ লাখ ৫৩ হাজার, শ্যাম সাগর পরিমান ৬ একর যাহার অংশ বিশেষ ২.৯৩ একর সরকারী খাস ও ভিপি খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ২ লাখ ৬০ হাজার এবং একই মৌজার গোবিন্দ সাগর ৫.১৮ একর ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়।

আর পুকুর গুলো খাতা কলমে ইজারা দেখানো হয়েছে শিলমাড়িয়া ইউপি রাতোয়াল মহিলা বিত্তহীন সমবায় সমিতি, বিদিরপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ও পুঠিয়া পাঁচআনী বাজার মৎস্যজীবী সমিতির নামে। কিন্তু উক্ত পুকুর গুলো উপজেলার কাঁঠালবাড়ীয়া গ্রামের মৃতঃ মতিউর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান আতিক সরকারী নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাছ চাষ করতে দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, সরকারী জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ এ বর্ণিত ৫১৬৭ পৃষ্ঠার ৯নং ধারাতে বর্ণিত বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। উক্ত পুকুর গুলো উল্লেখিত সমিতি লীজ নিয়ে নিজেরা চাষাবাদ না করে মধ্যস্বত্ব ভোগীর কাছে সাবলীজ দিয়ে সরকারী আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। শর্তবালীর ১৩ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে, ইজারাদার কর্তৃক কোন অবস্থাতেই ইজারাকৃত জলমহালের সম্পূর্ণ বা আংশিক কারো নিকট হস্থান্তর বা সাব লীজ প্রদান করা যাবে না।

অনুরুপ অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইজারা বাতিল করা হবে এবং জামানত সহ জমাকৃত ইজারা মূল্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এছাড়া ওই গ্রহীতা বা সমিতি পরবর্তী তিন বছর জলমহালের ইজারা সংক্রান্ত কোনো আবেদন করতে পারবে না।

লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মৎস্যচাষি আতিকুর রহমানের দাদা আব্দুল মজিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। উক্ত অভিযোগে তিনি ১৯৭২ সালে দালাল আইনে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটেন। ফলে আতিকুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্য।

এছাড়া সে পুঠিয়ার সরকারী স্বার্থ বিরোধী জালিয়াতকারী ও স্বঘোষিত পুঠিয়া রাজপরগণার রাজা দাবীকারী খলিলুর রহমানের ঘনিষ্ঠ লোক হিসাবেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে মৎস্যচাষি আতিকুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার নামে কোনো পুকুর নেই আর আমি মাছ চাষ করি না।

কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল মজিদের নাতি ও স্বঘোষিত পুঠিয়া রাজপরগণার মালিক দাবিদার খলিলুর রহমানের সহচর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওদের চিনি না। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি রুমানা আফরোজ বলেন, ইউএনও স্যার জলমহাল কমিটির সভাপতি, তিনি যে নির্দেশনা দিবেন সেই মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওলিউজ্জামান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পত্রটি সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে তদন্তের জন্য বলা করা হয়েছে, ওই প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শর্টলিংকঃ