Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

পুঠিয়া পিএন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ভেঙ্গে পড়েছে


আবু হাসাদ কামাল, পুঠিয়া:
পুঠিয়া পিএন সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, প্রায় দেড়শত বছরের পুরোনো রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। গতকয়েক বছর যাবত কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে আধুনিক মানের শিক্ষা ও প্রযুক্তির যুগেও বিপরিতগামী হয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার কারণে গত কয়েক বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে সর্ব মহলে।

 

অভিভাবকদের অভিযোগ শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানের চেয়ে নিয়ম বর্হিভূত কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে বেশী ব্যস্ত থাকেন। যার ফলে পাবলিক পরীক্ষা গুলোতে গড়ে দু’তিন জন ভালো ফলাফল করলেও বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা টেনে কষে পাস হচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানের দাবী তাদের পক্ষ থেকে কোনো রকম গাফলতি করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, পুঠিয়ার রাজা পরেশ নারায়ণ শিক্ষা অনুরাগী ছিলেন। তিনি গত রাজপরগণার প্রজাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পুঠিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়টি। পূর্বে বিদ্যালয়টিতে কয়েক বছর প্রাথমিক শাখা খোলা থাকলেও বর্তমানে শুধু মাধ্যমিকের পাঠদান চলছে। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা (ভোকেশনাল) বিভাগও চালু রয়েছে। গত প্রায় দু’বছর পূর্বে সারা দেশে উপজেলা ভিক্তিক একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণের তালিকায় নামের মাধ্যমে সরকারী করণ হয় এই প্রতিষ্ঠানটি।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালে জেএসসি পরিক্ষায় ৭৯ পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে পাস করেছে ৭৭ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩জন। অপরদিকে এ্সএসসিতে গত ২০১৯ সালে ৬৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে পাস করে ৬৪ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৫ জন।

আশরাফুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ তুলে বলেন, গত ১০ বছর পূর্বেও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান অনেক ভালো ছিল। বর্তমানে শিক্ষকরা ক্লাসে হাজিরা দিয়ে তাদের দ্বায়িত্ব শেষ করছেন। তারা পাঠদানের চেয়ে অত্যাধুনিক মানের মুঠোফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেকেই আছেন শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করতে হলে তাদের নিকট প্রাইভেট পড়তে এক রকম নিদের্শ দেন। বিষয়টি স্কুলের প্রধানের নিকট অবহিত করা হলেও তিনি কোনো সুরাহা করছেন না। যার ফলে প্রতিবছর এই ঐতিহ্যবাহী স্কুলের শিক্ষার মান অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক বলেন, বর্তমানে যে শিক্ষকরা রয়েছেন তাদের মধ্যে ২/১ জন বাদে সকলেই গত ১০ বছরের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত। স্থানীয় একজন র্শীষ ক্ষমতাসিন রাজনৈতিক নেতাকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তারা যোগদান করেছেন। যার কারণে বেশীভাগ শিক্ষকরা বেতনের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ইনকাম করতে নিয়ম ভর্হিভূত ভাবে কোচিং ও প্রাইভেট ব্যবসা শুরু করেছেন। অনেক শিক্ষক আছেন যারা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দেন, তার নিকট প্রাইভেট পড়লে বার্ষিক ফলাফলে বিশেষ মূল্যোয়ন করবেন। সে প্রলোভনে অধিংশ শিক্ষার্থীরা ক্লাসের চেয়ে শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেটে বেশী মনোযোগি হয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বাবু প্রশান্ত কুমার বলেন, স্কুলটির শিক্ষার মান বাড়াতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গাফলতি করা হচ্ছে না। তবে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চুড়ান্ত ফলাফল নিয়ে আমরাও চিন্তিত। আমি ইতিমধ্যে স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করতে বলে দিয়েছি। আর ক্লাসের মধ্যে কোনো শিক্ষকদের মুঠোফোন না রাখতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ওলিউজ্জামান বলেন, কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট বা কোচিং বিষয়ে পরামর্শ দেয় অথবা পড়ানো নিয়ম ভর্হিভূত। স্কুলটির শিক্ষার মান বাড়াতে অচিরেই শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করা হবে। আর আশানুরুপ ফলাফল না হওয়ার পিছনে শিক্ষকদের কোনো গাফলতি আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।

আরও পড়ুন মিলেমিশে ১৪ কর্মকর্তার দুই দেশ ভ্রমণ : অর্ধযুগ ধরে আরডিএ ’র প্রকল্প ফাইলবন্দি


Exit mobile version