পুঠিয়া রাজপরগণা প্রভাবশালীদের দখলে


আবু হাসাদ কামাল,পুঠিয়া:
রাজাদের শাসন আমলে পুঠিয়া রাজবাড়ী এলাকা শত্রুদের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে পরগণার চার পাশ জুড়ে বেষ্টনী হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল সুবিশাল দিঘী। ছিল হাজারও সেনা ও পাইক-পায়দা। রাজমহল তো দুরের কথা রাজপরগণায় সর্বসাধারণের প্রবেশও ছিল এক রকম নিষেধ। তখন রাজার অগোচরে অনেকই পদুকা হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে পরগণা পারাপার হতো।

কালের আবর্তে এখন সেখানে কোনো রাজা পরিবারের বসবাস নেই। নেই রাজার হুকমত। তবে রয়েছে তাদের পতিত জমি এবং রাজপ্রাসাদ। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্র-ছায়ায় অবৈধ ভাবে দখল করে নির্মাণ করছেন বাড়ী ঘর ও দোকানপাট। উজির নায়েবদের মক্তব গুলোতে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে আধা-ডজন খানেক ক্লাব, সংগঠন ও স্কুল-মাদ্রাসা। কর্তৃপক্ষের নজর দারীর অভাবে রাজপরগনা এলাকা ক্রমেই বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে বর্ষাবাচার্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র চিতাম্বর প্রথমে পুঠিয়া রাজবাড়ী ১৬১৬ খিঃ প্রায় ১শ’ ৬.৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। এর মধ্যে ৭৭.৫৮ একর ভূমি এবং ২৮.৫ একর জলাশয় (৭টি দিঘী) রয়েছে। রাজপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর চারআনী রাজা নরেশ নারায়ন বাহাদুর, পাঁচ আনী রাজা পরেশ নারায়ন বাহাদুর এবং মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী ভারত বর্ষে গমন করেন। এরপর তাদের ব্যবহৃত রাজপরগণা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা বিশেষ কৌশলে রাজাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ভবন ও স্থান দখল শুরু করে। বর্তমানে রাজ্যর নবুত খানা (বাধ্য বাদক ঘর) দখলে রয়েছে পুঠিয়া দুর্গামন্দির কেন্দ্রীয় বহুমূখী সমবায় সমিতি, নব কল্লোল ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স্মৃতি পাঠাগার ও উদায়ন ক্লাব। অতিথি শালা দখল করেছে পুঠিয়া আনসার ক্লাব, বাজার বণিক সমিতি ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (উপজেলা শাখা)।

সেনা প্রধানের কক্ষে রয়েছে মডেল চাইল্ড কেয়ার কিন্ডার গার্ডেন। উজির নাজিরদের মক্তবে গড়ে উঠেছে উদ্ভট গোষ্টি, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার (পুঠিয়া উপজেলা শাখা)। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে একাধিক ক্লাবসহ আরও সংগঠনের ঘর। রাজার ডাক্তার বাড়ী, স্বর্ণকার বাড়ী এবং চামারপাড়া গুলোও দখল করে নির্মিত হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধিন বাড়ী।

পাঁচআনী রাজমহলে প্রতিষ্টা করা হয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস। চারআনী রাজার ধর্মশালায় পুঠিয়া ইউপি তহসিল অফিস ও তার পাশে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা তাদের কার্যক্রম চলাছেন। একআনা ও পাঁচআনার রাজপ্রাসাদের কক্ষ গুলো ১৯৭৩ সাল থেকে অবৈধ ভাবে পুঠিয়া লস্করপুর ডিগ্রী মহাবিদ্যা নিকেতন দখল করে রেখেছিল।

তবে গত প্রায় ৫ বছর আগে রাজপ্রাসাদটি কলেজের নিকট থেকে দখল মুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, কর্তৃপক্ষের নজর দারীর অভাবে রাজপরগণা এলাকার মধ্যে রানীঘাটের পূর্ব পাশের আম বাগানসহ সর্বত্র প্রতিদিনই নির্মাণ হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ী ও দোকান ঘর।


নাট্যেব্যাক্তিত্ব কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল বলেন, পুঠিয়া রাজবাড়ী আমাদের একটি অমূল্য সম্পদ এটা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। রাজবাড়ী এলাকা দখল মুক্ত করতে গিয়ে আমাদের দেখতে হবে রাজাদের ঐতিহ্য উচ্ছেদ বা বিলুপ্ত যেনো না হয়। অযত্ন-অবহেলার কারণে প্রতিনিয়ত রাজপরগনার বিভিন্ন ঐতিহ্য বিলুপ্ত ঘটছে। সর্ব প্রথম রাজপরগণাটি সংরক্ষন করা প্রয়োজন। পরিপাটি করতে পারলে ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীতে প্রতিদিন দেশী-বিদেশী হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটবে। আর এতে করে এই এলাকার মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা (বগুড়া) নাহিদ সুলতানা বলেন, রাজবাড়ীর সকল পূরার্কীতি ও এর আশে-পাশের জায়গা গুলো আমাদের অধিনে রয়েছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব-এর সিমানার মধ্যে কোনো প্রকার অবৈধ স্থাপনা রাখা হবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, রাজবাড়ী এলাকা জুড়ে শেখ রাসেল শিশুপার্কসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রকল্প গুলো সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা হলে রাজবাড়ী ঘিরে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর এ সকল প্রকল্প শুরু করার আগে রাজবাড়ী এলাকার সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।


শর্টলিংকঃ