Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

পুরুষ ছদ্মবেশে নরসুন্দর দুই তরুণী


ইউএন নিউজ ডেস্ক:

নিজের সেলুনে কাজ করছেন জ্যোতি।

সেলুনে চুল দাড়ি কামাতে গিয়ে জানলেন এতোদিন যাদের কাছ থেকে এই পরিসেবা পেতেন তারা নরসুন্দর নয়, আঠারো বছর বয়সী দুই তরুণী। ‘পুরুষ ছদ্মবেশে’ সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করছেন এই দুই তরুণী।

এমন ঘটনাই ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি এলাকায়। এক দুইদিন নয় গত চার বছর ধরে ‘পুরুষের ছদ্মবেশে’ একটি সেলুন চালাচ্ছেন জ্যোতি (১৮) ও নেহা (১৬) নামের দুই তরুণী। স্থানীয় ও বহিরাগতদের বেশিরভাগ মানুষই তাদেরকে যথাক্রমে দীপক ও রাজু নামে চেনে।

পুরুষ ছদ্মবেশ ধারণ করতে তারা নিজেদের চুলকে ছোট করে রাখেন ও বেশিরভাগ সময়ই টিশার্ট ও প্যান্ট পরে থাকেন। কেন এমনটা করছেন এই দুই তরুণী প্রশ্নে তাদের জবাহ একটাই – জীবনধারণের উদ্দেশ্যে।

তাই বলে এমন ছদ্মবেশে নরসুন্দরের কর্ম! সেই প্রশ্নে সংবাদমাধ্যমে জ্যোতি ওরফে দীপক জানান, বেঁচে থাকার তাগিদেই তাদের এই ছদ্মবেশ ধারণ। সমাজের চোখে ‘ধুলো’ দিতে পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন তারা।

জ্যোতি জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা দীর্ঘদিন বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। টাকার অভাবে সেলুন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় তাদের পড়াশুনাও। একসময় ঘরের চুলায় আগুন দেয়াও বন্ধ হয়ে যায় তাদের। তাই রোজগারের কোনো উপায় না দেখে দুই বোন সিদ্ধান্ত নেন যে, বাবার সেলুন তারাই চালাবেন।

এতে বাঁধ সাধে সমাজ। মেয়ে হয়ে নাপিতের কাজ! আর কোনো উপায় না পেয়ে চুল কেটে ফেলে তারা। নাম বদলে দীপক ও রাজু নামধারণ করেন। একসময় বাবার মতোই নরসুন্দর হয়ে ওঠেন।

জ্যোতি বলেন, ‘ওই সেলুনটিই ছিল আমাদের একমাত্র রোজগারের পথ। তাই এমন পথ অবলম্বন ছাড়া সামনে আর কোনো উপায় ছিলনা আমাদের।’

তবে পথ অতো সহজ ছিলনা জানিয়ে জ্যোতির বোন নেহা ওরফে রাজু জানান, ‘ঘনিষ্ঠদের অনেকে আমাদের আসল পরিচয় জানতো। প্রথম দিকে তাদের থেকে প্রায় আমারা বিদ্রুপের শিকার হতাম। উঠতে-বসতে কটাক্ষ করা হতো আমাদের।’

তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠেছেন এই দুই সংগ্রামী তরুণী। জ্যোতি জানান, এখন অনেক লোক আসেন চুল দাড়ি কামাতে। কেউ তেমন এটা বাজে মন্তব্য ছুঁড়েনা আর।

এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ টাকা আয় হয় তাদের। এ টাকায় জীবন চালিয়ে অসুস্থ বাবার সেবাও করছেন পরিপূর্ণভাবে। তবে থেমে নেই তাদের পড়ালেখাও। সেলুনের কাজ শেষে অবসরে পড়ালেখা করে জ্যোতি এখন স্নাতকে পড়ছেন।

দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খেতে জ্যোতি-নেহার এই লড়াইয়ের গল্প ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে। প্রশংসিত হয় দুই বোন। প্রশংসার কথা শোনা যায় দুজনের বাবার মুখে, ‘মেয়েরা এই কাজ করছে জেনে প্রথমে কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সত্যিই তাদের কাছে আমি বাবা হয়ে ঋণী।’


Exit mobile version