পুলিশের এএসআই বলে কথা!


দুর্গাপুর প্রতিনিধি:

তিনি পেশায় বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আইনের লোক হলেও কাজ করেন সব গুলোই বেআইনি। পকেটে মাদক দিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়া, টাকা না পেলে নিরীহ মানুষ গুলোকে জেলে পাঠানো, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আতাঁত করে মাদক বিক্রি ও জোর করে অন্যের জমি দখল করা সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তার এসব অপকর্মের কারনে বারবার বদলী করা হলেও পদায়কৃত স্থানে গিয়ে একই কাজের সাথে জড়িত হন। ভুক্তভোগী লোকজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও বরাবরই পার পেয়ে যান তিনি। এতকিছু করেও পার পেয়ে যাওয়া পুলিশের ওই ছোট কর্মকর্তা হলেন এএসআই আশরাফুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানায় কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি রাজশাহীর পুঠিয়া ও চারঘাট থানায় থাকাকালীন নিরীহ মানুষকে মাদক মামলায় গ্রেফতারের ভয় মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে ফেঁসে যান।

সর্বশেষ থানা থেকে সিসি না নিয়েই নিজ এলাকা রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা গ্রামের এক
ব্যবসায়ী ও এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে এএসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পৌর সদরের সিংগা গ্রামের বকুল ইসলামের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় ৯ শতাংশ জমি প্রভাব খাটিয়ে জোর পূর্বক দখল করেছেন এএসআই আশরাফুল ইসলাম। এ নিয়ে থানা পুলিশ মিমাংসার চেষ্টা করলেও এএসআই আশরাফুল থানা পুলিশের মিমাংসা মানেননি। এমনকি দখল করা জমির কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতেও পারেননি তিনি।

বর্তমানে ওই জমিতে টিন ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে এএসআই আশরাফুল। জমি দখলের বিষয়ে কেউ তাকে কিছু বললেই তাকেই প্রকাশ্যে খুন করার হুমকী দিচ্ছে। এমনকি পুলিশে চাকুরী করার সুবাদে একটি রিভালবার তার কাছে সব সময় থাকেই। সেটি দেখিয়েই মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এএসআই আশরাফুল। সর্বশেষ ভাড়াটে ক্যাডার দিয়ে গত ২ মার্চ ব্যবসায়ী বকুল ইসলামের বাড়ি ভাংচুর করেন এএসআই আশরাফুল। ওইদিন রাতেই এএসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে আবারো বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী বকুল ইসলাম।

ব্যবসায়ী বকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে তিনি শঙ্কায় আছেন। এএসআই আশরাফুলের অব্যাহত হুমকী ধামকীর কারনে তিনি বাড়ি থেকে বের হতে পারছেননা। এমনকি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও যেতে পারছেন না।

এদিকে, এএসআই আশরাফুল একই ভাবে দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক এন্তাজুল আলম মৃধার ৭ শতাংশ জমি জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন। তিনিও এএসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিয়োগ পেয়ে দুর্গাপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম ঘটনার তদন্ত করতে গেলে তার তদন্তে সত্যতা মেলে। তবে এএসআই আশরাফুলের হুমকী-ধামকীর কারনে ওই এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেননা।

অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক এন্তাজুল আলম মৃধা বলেন, সুষ্ঠ বিচার না পেলে তিনি এএসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছেও লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান। এর আগে রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় থাকাকালীন এএসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। এতে থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারাও বিব্রত ছিলেন।

অভিযোগ উঠে ২০১৮ সালের বছরের ১৫ মার্চ বাগমারা উপজেলার ফিড ব্যবসায়ী লিটন বিকেলে মটোরসাইকেল যোগে চারঘাট উপজেলার বালাড়দিয়ার গ্রামে মুরগীর খামারে ওষুধ দিতে যান। কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে পুঠিয়া উপজেলার খলিফাপাড়া গ্যাস স্টেশনের সামনে পৌছালে এএসআই আশরাফুল ব্যবসায়ী লিটনকে থামার জন্য বলে। ব্যবসায়ী লিটন মটোরসাইকেল থামালে তার শরীরে তল্লাসী শুরু করেন এএসআই আশরাফুল। তল্লাসী করে কোন কিছু না পেয়ে এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী লিটনকে মাদক সেবন করেছিস বলে ধমকাতে থাকে। এ সময় এএসআই আশরাফুল নিজের  পকেট থেকে ১০টি ইয়াবা ট্যাবলেট বের করে ব্যবসায়ী লিটনকে বলে এইতো তোর পকেট থেকে ইয়াবা পাওয়া গেছে। এবার ৫ হাজার টাকা দে না হয় জেলে পাঠাবো।

ব্যবসায়ী লিটন নিরুপায় হয়ে এএসআই আশরাফুলের সাথে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবলের বিকাশ নাম্বারে ৫ হাজার টাকা বিকাশ করে দয়োর পর এএসআই আশরাফুল ব্যবসায়ী লিটনকে ছেড়ে দেন।

এর আগে এএসআই আশরাফুল চারঘাট থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তার সহকর্মী সহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে অশালীন আচরন সহ চাঁদাবাজি, আটক  বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। কিন্তু বারবার গুরুতর অপরাধ করেও টাকার জোরে প্রতিবারই পার পেয়ে যান পুলিশের ওই এএসআই আশরাফুল। তার এসব অপকর্ম রুখতে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামণা করেছেন ভুক্তভোগী লোকজন।

এ ব্যাপারে এএসআই আশরাফুলের সাথে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে (০১৭৫৬-৪৫৭৭৩৬) কল করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ফোনের লাইন কেটে দেন। দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খুরশীদা বানু কণা জানান, পুলিশের এএসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু মিমাংসা করে দেয়া হলেও সে কিছুতেই মিমাংসা মেনে নিচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রতকর অবস্থায় আছি বলেও জানান ওসি।


শর্টলিংকঃ