পেশার প্রতি করোনাক্লিষ্ট দুই সাংবাদিকের প্রত্যয়


এসএ টিভি’র রাজশাহী ব্যুরো চীফ জিয়াউল গনি সেলিম ও সময় টিভি’র ঢাকার স্টাফ রিপোর্টার আতিকুর রহমান তমাল দু’টি হৃদয়স্পর্শী পোস্ট দিয়েছেন।তারা দু’জনই আমার স্নেহপুত্তলি। আমারও দাগ কেটেছে। তাদেরও পরিবার আছে। ছোট্ট দু’টি অবুঝ শিশুসন্তান রয়েছে তাদের।

সেলিমের ফেসবুকের টাইমলাইনের এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছোট্ট শিশুকন্যা তাকে চুমু দিচ্ছে। তমালের কলিজার টুকরো এক মাস বয়সী তার শিশুকন্যা, যে জন্মের পর থেকে অনেক সংগ্রাম করে টিকে আছে।

জিয়াউল গনি সেলিম
জিয়াউল গনি সেলিম

এমতাবস্থায় তারা দু‘জনই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে বেরিয়ে যান। আবার করোনার ঝুঁকি নিয়েই ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। তমাল তার শিশুকন্যার কাছে আর যাবে না বলে পণ করেছেন। সেলিম তার পেশার প্রতি কতখানি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা তার কথায় বোঝা যায়। তিনি বলেছেন, পরিবারের মায়া ত্যাগ করে তিনি যখন বেরিয়ে যান, ভুলে যান তাদের কথা। বাড়িতে তার ছোট্ট শিশুটি তখন পিতার আদরের অপেক্ষায় থাকে, কখন ফিরে আসবে তার বাবা।

যেহেতু সময়টা মৃত্যুর পরওয়ানার। তাই অনুভূতির প্রাবল্যতাও বেশি।  নিত্যনতুন জটিলতা নিয়ে সাংবাদিকদের দিন শুরু হয়। নাওয়া,খাওয়া,বিশ্রাম কোন কিছুরই ঠিক ঠিকানা থাকে না। পারিবারিক জীবনে পেশার অনির্ধারিত সময়ের কারণে তাকে সুখ পেতেও বাধা দেয়।কখনও বা আত্মগ্লানি আর আত্মপ্রবঞ্চনায় ভরে যায় তার মন।বিপদের ভয় প্রতি পদে পদে। দুঃশ্চিন্তা প্রতি মুহুর্তেই। তাঁকে জনমত তৈরি করতে হয়। সত্যের জন্য নিরন্তন অনুসন্ধান করতে হয়। এইসব নিয়েই সাংবাদিকদের জীবন।

আতিকুর রহমান তমাল

সাম্প্রতিককালের জীবন আরো ভয়াবহ। জনগণ দেখছেন তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা। আমরা যখন ঘরে বসে যুদ্ধ করছি, তখন তারা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে, পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে ঢাল-তলোয়ার ছাড়াই সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত। তাই তমাল পলায়নপর ডাক্তারদের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সাংবাদিকরা ব্যক্তিগত সুরক্ষার অজুহাত দিয়ে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। নিজেদের যা আছে তাই নিয়েই মৃত্যুঝুৃঁকি মাথায় করে কর্তব্য কাজে ঝাাঁপিয়ে পড়েছেন।কোনো প্রণোদনার ধার ধারেন নি,শর্তও দেয়নি।

আমার শেষের কথা হলো, সাংবাদিক সমাজের প্রতীক হিসেবে এই দুই সাংবাদিককে বুকে ধারণ করে বলতে চাই, হে বিশ্ববাসী! তোমরা চেয়ে দ্যাখো সাংবাদিকরা যুগ যুগ ধরে এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ, ভয়াবহ ঝড়-ঝঞ্ঝা,দুর্যোগ কোনকিছুই তাদের আটকাতে পারে না। তারা কখনো পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেনা। যেমন, করোনা যুদ্ধকে তারা কঠিন হস্তে মোকাবিলা করছে। তারা সমকালের ইতিহাসের চঞ্চল স্রোত। তাদের চোখে ভেসে উঠে বিশ্ববাসীর সুখ-দুখ,হাসি-কান্না। তারাই বিশ্ববাসীর কণ্ঠস্বর।

(সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)


শর্টলিংকঃ