Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

পোড়াদহ মেলায় ৭০ কেজি ওজনের মাছ, ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি


ইউএনভি ডেস্ক:

উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রাণের সঙ্গে জুড়ে আছে নানারকম পার্বন আর মেলা। বাংলার গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন ঋতুতেই বসে গ্রামীণ মেলা। এমনই একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা বগুড়ার ‘পোড়াদহ মেলা’, যা এর আগে যার ‘সন্নাসী মেলা’ নামে পরিচিত ছিল।

মেলাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তিনশ বছরের ইতিহাস। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ইছামতি আর গজারিয়া নদীর ‘দহ’ পাড়ে বসতো এই মেলা। কালের পরিক্রমায় নদী ও দহ নাব্য হারিয়ে ফেলায় তাই মুখে মুখে মেলার নাম দাঁড়ায় ‘পোড়াদহ মেলা’।

মেলা ঘিরে আশেপাশের শতাধিক গ্রামে উৎসবের আমেজ চলতে থাকে। মেলাকে উপলক্ষ করে এলাকার জামাই আর ঝিদের নাইওর নিয়ে আসা হয়। প্রত্যেক বাড়িতে জামাই-ঝি’র আগমনে সরগরম হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের এক মেলবন্ধনে আবদ্ধ করে আসছে এই মেলা। সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটে এখানে।

পোড়াদহ মেলায় ৭০ কেজি ওজনের মাছ, ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি
ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাসের শেষ বুধবার এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর অন্যতম আকর্ষণ থাকে বিরাট আকারের সব মাছ আর মিষ্টি। সঙ্গে পাওয়া যায় নানারকম গৃহস্থালী সামগ্রী ও আসবাব।

এক সময় এই মেলায় প্রচুর কাঠের আসবাবপত্র আমদানি হতো। সেই জায়গায় এখন স্থান করে নিয়েছে লোহা ও স্টিলের আসবাবপত্র। সঙ্গে নানারকম প্লাস্টিক সামগ্রী। এসব কিছুকে ছাপিয়ে একদিনের এই মেলার মূল আকর্ষণ মাছ। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদের সার্থকতা প্রমাণ করতেই এই মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানি হয় বড় বড় বাঘাইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাস, সিলভার কাপ, বৃগেডসহ দেশীয় প্রজাতির নানান মাছ।

রীতি অনুযায়ী বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হয়ে গেল এ বছরের ‘পোড়াদহ মেলা’। মেলায় এবার সবচেয়ে বড় বাঘাইড় মাছটির ওজন ছিল ৭০ কেজি। ১৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায়। মাছের আমদানি ও কেনাকাটার জন্য তাই মেলাটি এখন মাছের মেলা হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেছে।

এ মেলায় নানান স্বাদের দেশীয় মিষ্টিরও আমদানি হয়। মাছের আকৃতির এক কেজি, দুই কেজি থেকে শুরু করে ১০ কেজি ওজনের মিষ্টিও গ্রাহকদের নজর কেড়েছে।

ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন বগুড়ার আদমদীঘির মুছা সরকার। তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছে গল্প শুনেছি এই পোড়াদহ মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি হয়। গরু ও মহিষের গাড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া লাগত সেই মাছ। সেটা ছিল শোনা গল্প। কিন্তু আজ তা বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য হলো। বর্তমানে হয়তো গরু মহিষের গাড়ি না থাকলেও যান্ত্রিক গাড়িতেই এসব বড় বড় মাছ আসছে। ছেলে রাসেল এত বড় মাছ কখনো দেখেনি। মেলায় এসে মাছ দেখলাম। খুব ভালো লাগছে।’

দিনাজপুরের বাসিন্দা আজাদ চাকরিসূত্রে বাস করেন বগুড়ায়। মেলা এসে চোখ জুড়িয়ে গেছে তারও। ঐতিহ্যবাহী নাইওর উৎসবের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি এলাকার জামাই হতে না পারায় আফসোস জানিয়ে বললেন, ছোটভাই অথবা ছেলে কাউকে অবশ্যই এই এলাকার জামাই বানাতেই হবে!

সিরাজগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী শুকুর সাকিদার বলেন, ‘এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। এবার একটি বড় বাঘাইড় মাছ এনেছি। ওজন ৭০ কেজি। ৭৫ হাজার টাকা দাম হাঁকা হয়েছে। ৭০ হাজার টাকা দাম উঠেছে।’ শুকুরের আশা, ৭৫ হাজার টাকাই বিক্রি হবে। পরে অবশ্য মাছটি ১৫শ টাকা কেজি দরে ভাগে ভাগে বিক্রি হয়।

মিষ্টি দোকানি খালেক জানালেন, এটা মাছের মেলা কিন্তু মাছের পাশাপাশি প্রচুর মিষ্টিও বিক্রি হয়। তাছাড়া মাছের মেলার জন্য মাছ আকৃতির ১০ থেকে ২০ কেজি ওজনের মিষ্টি তৈরি করেন তারা। এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বেচাবিক্রি কেমন হবে, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। সে কারণে সর্বোচ্চ ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি বানিয়েছেন।

বগুড়া শহর থেকে মেলা দেখতে যাওয়া শিশু মিমি জানায়, সে মামার সঙ্গে মেলা দেখতে এসেছে। এখানে এসে খুব মজা পেয়েছে সে। এদিকে এলাকার একজন জামাই দারাজ একটি ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনে হইচই ফেলে দেন। তিনি জানান, এবারই প্রথম এই মেলায় এসেছেন। এতবড় কোনা মেলায় এর আগে যাননি। আর এখানে এসে তার খুবই ভালো লাগছে।

গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে হাজারও মানুষ এই মেলায় আসে। এবারেও এসেছিল। পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞার সার্বিক নিদের্শনার এই মেলার আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবেই মেলার সমাপ্তি হয়েছে।


Exit mobile version