প্যানিক অ্যাটাক কী?


ডা. মুশফিক আলম পাশা:

প্যানিক অ্যাটাককে কোন রোগ বলা যাবেনা। এটি বিভিন্ন মানসিক রোগের উপসর্গ হতে পারে। যে কেউ মাঝেমধ্যে প্যানিক অ্যাটাকে ভুগতে পারেন ।প্যানিক অ্যাটাক হলে অনেকেই মনে করেন যে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে অথবা তিনি মারা যেতে পারেন। কিন্তু আসলে তেমন কিছুই হয়না।


প্যানিক অ্যাটাকের স্থায়িত্ব একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। শুরু হওয়ার পর এটা ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে নিজে নিজেই স্বাভাবিক হয়ে আসে।সাধারণত পাঁচ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা পর্যন্ত এর লক্ষণগুলো থাকে।

প্যানিক অ্যাটাকের কারণ:

কী কারণে প্যানিক ডিজঅর্ডার বা অতিরিক্ত ভয়,দুশ্চিন্তার কারণে নানা ধরণের মানসিক সমস্যা তৈরী হয়, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে কিছু জানা যায়নি।

ভীষণ ধরণের মানসিক চাপ যেমন, আকস্মিক কোন বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড ভয়, আতঙ্ক বা উদ্বিগ্নতা থেকে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।
তবে অল্পতে যারা উদ্বিগ্ন হন তাদের প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

প্যানিক ডিজঅর্ডার কাদের হতে পারে:

১. যাদের বদ্ধ জায়গায় দম আটকে আসে বা যারা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন।
২. যারা উঁচু কোন স্থানে উঠতে ভয় পান, বিশেষ করে বিমানে চড়তে।
৩. যারা লাইনে দাঁড়াতে ভীষণ বিরক্ত বোধ করেন।
৪. যেকোনো জনসমাগম স্থলে, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি স্থানে যারা অস্বস্তি বোধ করেন এবং সেইসব স্থান এড়িয়ে যান।
৫. সামাজিক মেলামেশায় ভীতি বা সোশ্যাল ফোবিয়া আছে যাদের।
৬. যারা মাদকাসক্ত বা নেশাগ্রস্ত।
৭. যাদের অ্যাগারো ফোবিয়া কিংবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাজনিত সমস্যা আছে।

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ:

এর কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ রয়েছে। তারমধ্যে কিছু হল

১. শ্বাসকষ্ট হওয়া, দম আটকে যাওয়া ভাব।
২. বুক ধড়ফড় করা। অনেকেই মনে করেন হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।
৩. মাথা ঘোরায়, দুর্বলভাব হয়।
৪. হাত পা অবশ হয়ে আসে। কাঁপতে থাকে।
৫. ভীষণ আতঙ্ক বা মৃত্যুভয় কাজ করে।
৬. ঘাম হয়। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
৭. শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি হয়।

প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা:

সাধারণ প্যানিক অ্যাটাকে তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে প্যানিক ডিজঅর্ডার হলে অবশ্যই মনরোগবিদের শরণাপন্ন হতে হবে।

সাধারণত মাসে যদি চার বার বা তার বেশি প্যানিক অ্যাটাক হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভুগছেন।

পরীক্ষায় এই সমস্যা সনাক্ত হলে রোগের মাত্রা বুঝে একেকজনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি হবে একেক রকম।

সেটা কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি, মেডিকেশনসহ আরও বিভিন্ন উপায়ে হয়ে থাকে।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই রোগ পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ।
যদি পরীক্ষায় তার বড় ধরণের ডিজঅর্ডার ধরা না পড়ে, সাধারণ কোন প্যানিক অ্যাটাক হয়, তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় তাদের কগনিটিভ বিহ্যাভিয়ার থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে।

অর্থাৎ এই অ্যাটাকের সময় তাদের যে ভুল চিন্তা কাজ করে, আতঙ্কগ্রস্ত হন। এই থেরাপির মাধ্যমে তাদের সেই চিন্তার পদ্ধতিটি পরিবর্তন করা হয়।
এছাড়া রিল্যাক্সেশন থেরাপিও দেয়া হয়। এর মাধ্যমে মূলত রোগীর স্নায়ুকে শিথিল হতে সাহায্য করা হয়।

কারণ এই অ্যাটাক হলে অনেকেই ভাবতে থাকেন, তিনি হয়তো একটু পরে মারা যাবেন বা তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।

এছাড়া শারীরিক উপসর্গের ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে অনেকে ভয় পেয়ে যান। এতে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।

এক্ষেত্রে তাদের এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে রোগীকে সচেতন করে তুলতে হবে। যেন তারা প্রত্যেকবার একে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন।

প্যানিক অ্যাটাক হলে প্রাথমিক অবস্থায় অস্বস্তিকর বা ভীতিকর পরিবেশটি এড়িয়ে যেতে হবে।

রোগীকে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে এবং মনোযোগ যেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে থাকে।

পাশের মানুষটিকে বলতে হবে যেন এমনটি হলে তিনি যেন আপনাকে শিথিল হতে সাহায্য করেন।
নিজেকে বোঝাতে হবে যে এই সমস্যাটি অস্থায়ী।
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে l


শর্টলিংকঃ