প্রক্টর বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ইবি, অবরুদ্ধ ক্যাম্পাস


ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য যোগদানকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের অব্যাহতির দাবিতে আন্দোলন করছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। রোববার বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তাল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে দাবি আদায় না হওয়ায় উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা।

এর আগে শনিবার প্রক্টর পরিবর্তনের জন্য এক দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল তারা। সময় শেষ হলেও প্রশাসন প্রক্টর পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ক্যাম্পাস অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এদিকে আন্দোলনকারীদের কাছে সাত দিনের সময় চেয়েছে কতৃপক্ষ। তবে দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের নেতা-কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা একটার দিকে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্ট থেকে প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনে উপাচর্যের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর সাথে দেখা করেন নেতাকর্মীরা। এসময় তারা অধ্যাপক ড. মাহবুবের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে প্রক্টরের দ্বায়িত্ব পালনকালে তার নির্দেশে ছাত্রলীগের ওপর গুলি বর্ষণ, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তারা প্রক্টর পরবির্তনের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

এসময় ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘আমরা এর আগেও একই অভিযোগে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের অভিযোগ তুলে তাকে প্রক্টর পদে না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। আমাদের অনুরোধ না রেখে আপনারা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ তাকে প্রক্টর হিসেবে মানে না। গতকালও (শনিবার) আপনাদেরকে প্রক্টর পরিবর্তনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিলো। এবার সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো।’

প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য সময় দিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে দেয় নেতাকর্মীরা। ফলে ক্যাম্পাস থেকে দুপুর শিফটের কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে ছেড়ে যেতে পারেনি। এতে অবরুদ্ধ পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের অপসারণের দাবি সংবলিত বিভিন শ্লোগানে ক্যাম্পাসে দফায় মিছিল করে। তারা বেলা আড়াইটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময় (সাড়ে ৪ টা) শেষ হলেও প্রক্টর পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। তবে বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক খুলে দেয় তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সাত দিনে ক্যাম্পাস মাদক ও অছাত্রমুক্ত করার প্রত্যায় নিয়ে দ্বায়িত্ব গ্রহন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় করা যায়না। ছাত্রলীগকে বলা হয়েছে একটু সময় দিতে। তাছাড়া অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে আমরা অন্তবর্তীকালী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যোগ্য কাউকে খোঁজা হচ্ছে। যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে পেলে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিব।’

উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর ৩য় বারের মত প্রক্টর হিসেবে যোগদান করে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান। এর অগেও সালে ছাত্রলীগের দাবিতে ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ড. মাহবুবর রহমানকে প্রক্টর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।


শর্টলিংকঃ