নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাসের বইটি এবার একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে। যার কাটতি বাড়াতে মলাটের পেছনে খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ‘ফ্ল্যাপ বা প্রশসংনীয় মন্তব্য’ যুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন লেখক। দেখিয়েছিলেন অর্থের প্রলোভনও।
তবে পাণ্ডুলিপি নাড়াচাড়া করে তা ‘আদৌ উপন্যাস নাকি বিদেশি গ্রন্থের বমনমাত্র’ তা বুঝেই উঠতে পারেননি কথাসাহিত্যিক। ফলে দেননি কোনো ফ্লাপও। অথচ প্রকাশিত বইয়ে তাঁর নামে ‘ভুয়া প্রশংসাবাণী’ ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যা ভয়ংকর প্রতারণার সামিল বলে অভিযোগ তুলেছেন হাসান আজিজুল হকের।
জানা যায়, অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশনী থেকে লেখক মাসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাস প্রকাশ করা হয়। উপন্যাসটি লেখক মহিবুল আলমের ‘তলাপাতার পুঁথি’ উপন্যাস থেকে নকলের অভিযোগ তুলে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যেই জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢাললেন খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক নিজে। তুললেন ভয়ংকর প্রতারণার অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ‘প্রতারিত’ হওয়ার অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক একুশে পদকজয়ী কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। একই সঙ্গে বানোয়াট ‘ফ্লাপ বা শংসাবচনটি’ প্রত্যাহার করে ‘আগস্ট অবছায়া’ বইটির মলাট নতুনভাবে ও সংশোধিত আকারে প্রকাশ করতে প্রথমার প্রকাশককে অনুরোধ জানিয়েছেন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক।
‘আগস্ট আবছায়া’ বইটির লেখক মাসরুর বেসরকারি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এবারের বইমেলায় প্রথমা থেকে বেরিয়েছে মাসরুরের বইটি; এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে হাসান আজিজুল হক লিখেছেন, মাসরুর আরেফিন সপ্তাহ খানেক আগে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে উপন্যাসটির একটি পাণ্ডুলিপি তাকে দেখাতে চান। তিনি তাতে সায় দিয়ে পাণ্ডুলিপিটি পাঠাতে বলেছিলেন। কিন্তু স্পাইরাল-বাইন্ডিং করা সেই সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি আমার কাছে আসার পর শুরু হল এক নতুন বিপত্তি, মাসরুর বারবার আমাকে টেলিফোন করে তার সেই উপন্যাসের জন্য দ্রুততম সময়ে একটি ‘ফ্ল্যাপ’ বা শংসাবচন লিখে দিতে বলে।
বিবৃতিতে কথাসাহিত্যিক আরও উল্লেখ করেছেন, শুধু সে নিজে ফোন করেই ক্ষান্ত হয়নি, সাংবাদিক মারুফ রায়হানকে দিয়েও বারবার টেলিফোন করাতে থাকে। এমনকি এক সময় সে এই ফ্ল্যাপটুকু লেখা বাবদ আমার ব্যাংক একাউন্টে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দেয়, কিন্তু আমি সে প্রস্তাব তখনই প্রত্যাখ্যান করি।’
পাণ্ডুলিপিটি কিছু অংশ পড়ার কথা জানিয়ে হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘তার ওই ওই পাণ্ডুলিপি নাড়াচাড়া করে তা আদৌ উপন্যাস নাকি নানাবিদ বিদেশি গ্রন্থের সারের বমনমাত্র- তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। এরপর মারুফ রায়হানের ‘অনবরত’ টেলিফোন পাই।
তিনি বলেন, উপায়ন্তর না দেখে আমি পরে একদিন টেলিফোনে ভদ্রতার খাতিরে তাকে উপন্যাস সম্পর্কে দু-চারটি কথা বলি নেহাতই অনানুষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু এখন দেখছি যে সে আমার নামে মনগড়া কথা বানিয়ে তা ওই বইয়ের পেছন-মলাটে বসিয়ে দিয়েছে। বইয়ের প্রচারে ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডেও তার নামে ভুয়া বক্তব্যটি প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হাসান আজিজুল হক।
ক্লিক করে দেখুন: হাসান আজিজুল হকের পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি
বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক বলেন, “আমার সারল্য ও স্নেহের সুযোগ নিয়ে তারা আমার মানহানি ঘটিয়েছে এবং আমার সঙ্গে স্পষ্টই প্রতারণা করেছে,” বলেন তিনি। হাসান আজিজুল হকের বিবৃতি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে কথা বলতে তার দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।