প্রবাসী প্রেমিকার স্বামীকে খুন করতে এসে ধরা পড়ল চার বন্ধু  


বিশেষ প্রতিবেদক :

প্রায় ৫ বছর আগে তানিয়ার বিয়ে হয়েছিল কাঞ্চনের সঙ্গে। বিয়ের পর তানিয়া চলে যায় সৌদি আরবে। সেখানে একটি বিউটি পারলারে কাজ করে সে। বছর দুয়েক আগে রাসেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেম তানিয়ার। রাসেলকে বিয়ে করতে সিদ্ধান্ত নেয় স্বামী কাঞ্চনকে হত্যার। এজন্য ২০হাজার টাকা আগ্রিম রাসেলের কাছে পাঠিয়েছিল। এরপরই পাসপোর্ট করানোর কথা বলে কাঞ্চনকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে নিয়ে আসে রাসেল ও তার তিন বন্ধু।

তানিয়ার কথিত প্রেমিক রাসেল

 বাগেরহাট থেকে খুন করতে এসে রাজশাহীতে ধরা পড়েছে চার বন্ধু। শনিবার দিনগত রাতে চারঘাট উপজেলা ফুলতলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- বাগেরহাটের মোল্লারহাট থানার রাসেল ও তার বন্ধু সজীব, মিরাজ ও কাওসার। এরা সবাই এলিট সিকিউরিটি ফোর্স কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মী। হত্যার পর গলাকাটা গুজব বলে চালিয়ে দিতেই এ পরিকল্পনা করেছিল তারা।

রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ্ জানান, বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট এলাকার কাঞ্চু শিকদার ওরফে কাঞ্চনের স্ত্রী তানিয়া সৌদি আরবে বিউটি পারলারে চাকরি। মোবাইলে একই এলাকার রাসেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তানিয়া। তানিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্বামী কাঞ্চনকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে কৌশলে নিয়ে আসে রাসেল ও তার তিন বন্ধু। এজন্য তানিয়া রাসেলকে ২০হাজার টাকাও দিয়েছিল।

এসপি মো. শহিদুল্লাহ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ছেলেধরা বা গলাকাটার গুজবের সুযোগ নিতে চেয়েছিল রাসেল। কাঞ্চনকে হত্যার পর গলাকাটা বলে প্রচারের চেষ্টা করে। এজন্য সে কয়েকদিন আগে রাজশাহীর চারঘাটের ফুলতলা এলাকার একটি বাগানকে বেছে নেয় হত্যাকাণ্ডের স্থান হিসেবে।  ওই স্থানের ছবি তানিয়ার কাছে সে ইমো পাঠায়। ছবি দেখার পর তানিয়াও ওইবাগানটিকে নিরাপদ স্থান মনে করে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেয়।

গ্রেফতারকৃত রাসেল, মিরাজ, কাওসার ও সজীব

পরিকল্পনা মতো, পাসপোর্ট করানোর নাম করে তানিয়ার স্বামী কাঞ্চনকে রাসেল ও তার তিন বন্ধু  মিলে ট্রেনে করে রাজশাহী নিয়ে আসে। এরপর মিরাজ ও কাওসার কাঞ্চনকে নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চারঘাট উপজেলা সেই আমবাগানের উদ্দেশে ব্যাটারিচালিত অটোতে চড়ে রওয়ানা হয়। ফুলতলা বাজার এলাকায় পৌঁছলে কাঞ্চনের মনে সন্দেহ জাগে। সে তখনই চিৎকার করতে করতে দৌড় মারে। এসময় বাজারের লোকজন মিরাজ ও কাওসারকে আটক করে পুলিশের সোপর্দ করে।পুলিশ তাদের কাছ থেকে ছুরি ও চেতনানাশক ওষুধ জব্দ করেছে। পুলিশের জেরার মুখে তারা মুলপরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেয়।

তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে রাসেল ও সজীবকে আটক করে ডিবি পুলিশ। রাসেল বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার গোড়ফা গ্রামের রবিউল শেখের ছেলে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন এলাকার হাসেম আলীর ছেলে সজীব, মিরাজ ফতুল্লার  আলীগঞ্জ এলাকার মজিবের ছেলে এবং কাওসার পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সলুয়াবাগি গ্রামের  মোশারফ হোসেনের ছেলে। কাওসার ফতুল্লায় ভাড়া থাকতো।

পুলিশ সুপার আরো জানান, কাঞ্চনকে হত্যার বিষয়ে তানিয়ার সঙ্গে রাসেলের ফোনালাপ ও ইমোতে কথোপকথনের অডিও পাওয়া গেছে। তবে কাঞ্চন তাদের হাত ছেড়ে ছাড়া পাওয়ার পরই নিজ এলাকা বাগেরহাটের গোড়ফা চলে গেছে। এ বিষয়ে মামলা করতে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে কাঞ্চন। সে আসার পরই মামলা হবে।


শর্টলিংকঃ