Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

প্রযোজকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন


বিনোদন ডেস্ক:

প্রতিবছরেই কমছে সিনেমা। কমছে সিনেমা হলও। এখন হাতে গোনা পাঁচ–ছয়টি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঢিমেতালে ছবি বানাচ্ছে। অথচ ২০১০ সালের দিকেও প্রায় শতাধিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। এখন যাঁরা নিয়মিত প্রযোজনা করছেন, তাঁরাও সরে পড়তে পারেন, এমন ধারণা চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

এর পেছনে নানা সমস্যার মধ্যে বড় সমস্যা হিসেবে হল–মালিক ও প্রযোজকের মধ্যে টিকিটের টাকার অসম বণ্টন, বছরের পর বছর প্রযোজকদের টাকা সিনেমা হলে আটকে থাকাকে দায়ী করলেন প্রযোজকেরা। ঢাকার চলচ্চিত্রে হল–মালিক ও প্রযোজকের মধ্যে টিকিটের আয় বণ্টন নিয়ে আছে নানা ঝামেলা। প্রতিটি টিকিট বিক্রির টাকা থেকে হলের ব্যবস্থাপনা খরচ, এসি চার্জ, পৌর কর, ভ্যাট বাদ দিয়ে বাকি টাকা হল–মালিক ও প্রযোজকের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। প্রযোজক যে অংশটুকু পাচ্ছেন, তা থেকে আবার হলের মেশিন ভাড়া, ব্যানার, হলের পোস্টার খরচ, বুকিং এজেন্টের কমিশন, হলে পাঠানো প্রতিনিধিদের পারিশ্রমিকও প্রযোজককেই বহন করতে হয়। প্রযোজকদের ভাষ্য, এই খরচগুলো মিটিয়ে তাঁদের হাতে আর কিছুই থাকে না।

ঢাকার সিনেমা হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মধুমিতা হলের ডিসি প্রতিটি টিকিটের দাম ১৫০ টাকা। শতাংশ হিসাবে এই ১৫০ টাকা থেকে ব্যবস্থাপনা, এসি, ভ্যাট, কর বাবদ ৯০ টাকা আগেই হল–মালিক কেটে রাখেন। বাকি ৬০ টাকা প্রযোজক ও হল–মালিক অর্ধেক ভাগাভাগি করেন। এতে ১৫০ টাকার মধ্যে ১২০ টাকাই পাচ্ছেন হল–মালিক আর ৩০ টাকা পাচ্ছেন ছবির প্রযোজক। আবার এই ৩০ টাকা থেকেই প্রযোজককে হলের মেশিন ভাড়া, ব্যানার, পোস্টার খরচ, বুকিং এজেন্টের কমিশন এবং হলে পাঠানো প্রতিনিধিদের পারিশ্রমিক দিতে হয়।

এমন জটিল নিয়মে চলছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হলগুলো। প্রযোজকদের দাবি, এমন নানা জটিল হিসাব–নিকাশে প্রযোজকের হাতে সিনেমা লব্ধ আয় আর আসছে না। তাই তাঁরা সরে পড়ছেন। কিবরিয়া ফিল্মসের কর্ণধার প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, ‘টিকিট বিক্রির টাকার ভাগাভাগির বৈষম্যের সমাধান হতে হবে। ভ্যাট ও করের নামে টাকা কেটে নেওয়া বন্ধ না হলে বাকিরা ছবি তৈরি বন্ধ করে দেবেন।’

হার্টবিট প্রোডাকশনের কর্ণধার তাপসী ফারুক বলেন, ‘হল–মালিকদের এই নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও প্রযোজকেরা কোনো আয় ঘরে তুলতে পারছেন না।’

ফারুক বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই এই নিয়মের পরিবর্তন চেয়ে আসছি। সব হল–মালিক নয়, অনেক হল–মালিকই বিভিন্ন ইস্যু দেখিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা করবেন হল–মালিক। সেই হলের মেশিন ভাড়া প্রযোজককে দিতে হবে কেন?’

বিষয়টি স্বীকার করেন মধুমিতা হলের মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘এ নিয়মটি আগে থেকেই ছিল। এরপরও তো আমরা দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে চলছি। হল বাঁচাতে পারছি না। ভালো মানের ছবি নিয়মিত তৈরি হলে দর্শক আসত, হল–মালিক ও প্রযোজক উভয়ই বাঁচত।’

এদিকে টাকা আটকে রাখারও অভিযোগ এসেছে হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাপসী ফারুক জানান, মণিহার সিনেমা হলের কাছে ছয় লাখ টাকা পান তিনি। হলটির ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘কিছু টাকা পাবেন তাপসী ম্যাডাম। আস্তে আস্তে দিচ্ছি।’ প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া জানান, তাঁর আমদানি করা ভাইজান এলো রে ছবির পাঁচ লাখ টাকা আটকে আছে চম্পাকলিতে। হলটির মালিক সালাউদ্দিন সরকার বলেন, ‘বুকিং এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করি। তবে জানতে পেরেছি, তারা সাতটি সিনেমার টাকা প্রযোজকদের দেয়নি।’ এ ছাড়া পরিচালক অমিতাভ রেজা জানান, অনেকগুলো হলে আয়নাবাজি ছবির ৭০ লাখ টাকা আটকে আছে। ঢাকা অ্যাটাক ছবির প্রযোজক নাজমুল হাসান চৌধুরী বলেন, সাত লাখ টাকা বিভিন্ন হলে আটকে আছে এখনো।

এ ব্যাপারে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, লোকসানে জর্জরিত হলগুলো। হলও বাঁচাতে হবে। মাঝেমধ্যে প্রযোজকেরা পার্সেন্টেজের টাকা হয়তো হল কর্তৃপক্ষের কাছে আটকে থাকে। কিন্তু সময় নিয়ে তা পরিশোধ করা হয়।

প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিঞা আলাউদ্দিন প্রদর্শক সমিতির কাছে অভিযোগ করার আহ্বান জানান।


Exit mobile version