প্রায় ৫৯লাখ টাকা লোপাটে জড়িত দু’প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বিএমডিএ


বিশেষ প্রতিবেদক :

কৃষিভিত্তিক স্বায়ত্ত্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠানে ১৮১টি চেক টেম্পারিং করে লোপাট করা হয়েছে প্রায় ৫৯ লাখ টাকা। তবে প্রমাণ গায়েব করতে পুড়িয়ে দেয়া হয় নথিপত্রও। তদন্তে এমন ভয়াবহ জালিয়াতি ধরা পড়লেও অভিযুক্তরা এখনো বহাল তবিয়তে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করলেও তা আমলে নেয় নি বিএমডিএ।

প্রায় তিন বছর আগে এক আগুনের ঘটনা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা বিএমডিএ’র রাজশাহীর গোদাগাড়ী জোন-২ কার্যালয়ে ক্যাশ শাখায় হঠাৎ আগুন লাগে ২০১৬ সালের ২৬ডিসেম্বর রাতে। এঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসে কীভাবে ১৮১টি চেক টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে সরকারী টাকা লোপাট হয়েছে।ঘটনা গুরুতর হওয়ায় প্রথমে বিএমডিএ’র দুটি ও পরে অধিকতর তদন্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের টিম।

৬৫৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ওই কার্যালয়ের সহকারী হিসাব রক্ষক মতিউর রহমান ও সহকারী কোষাধ্যক্ষ খাবিরুদ্দিন কীভাবে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন। ১৫৪টাকার চেক টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে ৮৯হাজার ১৫৪টাকা, ৪৫০টাকার চেক করা হয়েছে এক লাখ ৪৫০টাকা ও ৬২১টাকার চেকে লেখা হয়েছে এক লাখ ৬২১টাকা। এভাবেই ২০১১-২০১২ অর্থবছর হতে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ৫৮লাখ ১২হাজার ৩২১টাকা। তবে চেকের মুড়ির অংশগুলোতে ঠিকঠাক রয়েছে প্রকৃত টাকার অংক।

আনোয়ার হোসেন

বিএমডিএ’র অডিট অফিসার শ্রী বাসুদেব চন্দ্র মহন্ত জানিয়েছেন, চেক টেম্পারিংয়ের প্রমাণাদি ধ্বংষ করতে খাবিরুদ্দিন আগুন লাগিয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে তিনটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই। প্রথম টেম্পারিং করেছিল মতিউর। এরপর খাবিরুদ্দিন।

অভিযুক্ত খাবিরুদ্দিন ও মতিউর রহমান তদন্ত কমিটিগুলোর কাছে নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন। তবে তাদের দাবি, এর পেছনে  ছিলেন তৎকালীন দুই সহকারী প্রকৌশলীও। এবিষয়ে মতিউর বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে আমাকে শাস্তি দিয়ে িএক রকম ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমি এর নিষ্পত্তি চাই। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছি। তবে তার দাবি, তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলীর নির্দেশেই তিনি একাজ করেছিলেন। তিনি সেই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। খাবিরুদ্দিনের দাবিও প্রায় একই।

                                    জিএফএম হাসনুল ইসলাম

তবে এধরণের ঘটনার পরও পিএফ ফান্ড থেকে খাবিরুদ্দিনকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে বিএমডিএ। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরও কীভাবে ঋণ পেলেন তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর ২০১৭সালের জানুয়ারিতে এ দু’কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও জিএফএম হাসনুল ইসলাম এখনো বহাল তবিয়তে। ওই প্রতিবেদনে অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশও রয়েছে। কিন্তু সে পথেও আর হাঁটেনি বিএমডিএ। আনোয়ার হোসেন বর্তমানে আত্রাই ও হাসনুল মোহনপুরে বিএমডিএ’র কার্যালয়ে কর্মরত।

তবে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত না হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অ্যাকশন নেয়া হয় নি। এছাড়া খাবিরুদ্দিন ঋণ বরখাস্ত হওয়ার আগেই ঋণের আবেদন করেছিল। তাই ঋণ পেয়েছে।


শর্টলিংকঃ