ফের সরগরম হচ্ছে রাজনীতি


ইউএনভি ডেস্ক:

জাতীয় সংসদের পাঁচ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১৪১ জন। ইতোমধ্যে তিন আসনে দলীয় প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি দুটি আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি।

এখন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত বিপুলসংখ্যক নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানোই দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সবাইকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে-এমন হুশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল। এখানে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন চাইবেন-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে বা দেবে তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঁচটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ৩০ আগস্ট আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডসভা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে আয়োজিত সভায় পাবনা-৪, ঢাকা-১৮, ঢাকা-৫, সিরাজগঞ্জ-১ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। ওই দিন পাবনা-৪ (আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী) আসনের উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাকি চারটি আসনে তফসিল ঘোষণার পর দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ঢাকা-৫ আসনে কাজী মুনিরুল ইসলাম মনু এবং নওগাঁ-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন হেলালকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তফসিলের পর বাকি দুটি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনেও দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবীব হাসান এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়কে দলীয় প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এদিকে ৫টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্তের খবরে আসনগুলোয় অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভও। যাদের নাম গণমাধ্যমে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নেতাকে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন। তবে ভেতরে ভেতরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে।

এদিকে পাবনা-৪ আসনকে কেন্দ্র করে শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের ৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কোন্দল এড়াতে এবং এলাকার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবারের বাইরে গিয়ে নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানোর কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় সমন্বয় কমিটিও করে দেয়া হয়েছে।

নওগাঁ-৬ আসনের প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলমের স্ত্রীসহ ৩৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলালকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে-এমন খবরে তার অনুসারীরা যেমন উল্লাস করছেন, অন্যদিকে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। জানা গেছে, মনিরুজ্জামান হেলাল গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন।

যে কারণে স্থানীয়ভাবে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্র বরাবর সুপারিশও পাঠানো হয়েছিল। এদিকে এই আসনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এক বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও ওই আসনের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী যারা ছিলেন তারা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বলা হবে।

এদিকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা না হলেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়কে প্রার্থী করা হচ্ছে-এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এই আসনটি সব সময় আওয়ামী লীগের আসন হিসেবেই পরিচিত। এবারের উপনির্বাচনে এই আসনেই সবচেয়ে কম (তিনজন) দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয়কে মনোনয়ন দেয়া হলে বাকি প্রার্থীরা কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। ছোটখাটো ক্ষোভ বা মান-অভিমান থাকলেও শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকন্যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে চূড়ান্ত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।

দীর্ঘদিন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা হাবিবুর রহমান মোল্লা গত ৬ মে মারা যান। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডেমরা, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ২০ জন। তাদের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়া কাজী মনিরুল ইসলাম মনু রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এই আসনে অন্যতম প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় দীর্ঘদিন পর এই আসন মোল্লা-পরিবারের বাইরে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হল। ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি ধরে রাখতে দলের সব মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

তবুও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি

আসন্ন পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। ইতোমধ্যে পাবনা-৪ আসনের দলীয় প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার বাকি চারটি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অতীতের অভিজ্ঞতায় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে। তারপরও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন তারা। দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটি। অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও নির্বাচনে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা। প্রথমত, ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে, দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ ফের উন্মোচিত হবে। অনিয়মকে তারা ইস্যু বানিয়ে রাজনীতিকে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবে। সর্বশেষ নির্বাচনের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হবে। ভোটকে কেন্দ্র করে নিষ্ক্রিয় নেতারা সক্রিয় হবেন। এতে দলের সাংগঠনিক গতি বৃদ্ধি পাবে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করা অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো। তারা দেশের নির্বাচন ‘সিস্টেমটাই’ ভেঙে ফেলেছে। নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। এমনটা জানার পরও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। নির্বাচন নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন কতটা নির্লজ্জ হতে পারে- তা আমরা জাতির সামনে উন্মোচন করতে চাই।

তিনি বলেন, নির্বাচনে নানা অনিয়ম হবে- এমন আশঙ্কার পরও জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিপুল বিজয় হবে। কারণ জনগণ সরকারের অপশাসন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মুখিয়ে আছে। সুযোগ পেলে ব্যালটের মাধ্যমে তারা সেই প্রতিবাদ জানাবে। ভোটারদের প্রতি আমাদের সেই আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

ঢাকা-৫, নওগাঁ-৬, ঢাকা-১৮, সিরাজগঞ্জ-১ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের মধ্যে তিনটির তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনের তফসিল শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। এসব আসনের মধ্যে পাবনা-৪ এর প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বাকি চারটি আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হবে। পরদিন পর্যন্ত তা জমা দেয়া যাবে। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে এ চার আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, করোনা মহামারীর মধ্যে উপনির্বাচনে যাওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন কেউ কেউ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারকের কেউ কেউ মনে করেন, করোনার কারণে বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর একটা সুযোগ তৈরি হবে। এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে। তাই নানা আশঙ্কার পরও নির্বাচনে অংশ নেয়ায় রাজনৈতিকভাবে তারা লাভবান হবেন।

উপনির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পরপরই নড়েচড়ে বসেছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এলাকায় পোস্টার, ব্যানারেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে প্রচার। মনোনয়ন পেতে লবিংও অব্যাহত রেখেছেন। সিনিয়র নেতাদের বাসায় বাসায় ধরনা দিচ্ছেন তারা। তবে দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের ওপরই ভরসা রাখতে চাইছেন দলটির হাইকমান্ড।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। আসন্ন উপনির্বাচনেও ইতোমধ্যে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।

জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান হাবিব যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটের সিস্টেমটাকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে গেছেন তাতে জনগণ এখন নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করছে না। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে লড়াই করব। নির্বাচন কিছুটা অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

নওগাঁ-৬ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান সাবেক এমপি আলমগীর কবির। এবারও তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে। আলমগীর কবির নির্বাচন করবেন কিনা এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি নির্বাচন করতে না চাইলে সেক্ষেত্রে তার ভাই আনোয়ার হোসেন বুলুকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনক চাঁপাকে আসন্ন উপনির্বাচনেও মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তবে তিনি ছাড়াও নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, সেলিম রেজা ও টিএম তাহজিবুল এনাম মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঢাকা-৫ আসনে গত নির্বাচনের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীকেই মনোনয়ন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ঢাকা-১৮ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন। এবার জোটগতভাবে নির্বাচন না করায় এখানে বিএনপির নতুন মুখ দেখা যাবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম কফিলউদ্দিন আহম্মেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী এ তিনজন এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর ও কফিলউদ্দিন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। প্রতিদিনই তারা নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।

জানতে চাইলে কফিলউদ্দিন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় ভোট সুষ্ঠু হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। দলীয় মনোনয়ন পেলে তারপরও চেষ্টা করব ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। ভোট ন্যূনতম সুষ্ঠু হলে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জয়ী হবে।

জানতে চাইলে এসএম জাহাঙ্গীর যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট কতটা সুষ্ঠু হবে তা সবাই জানে। তারপরও আমরা আশাবাদী। ভোটাধিকার রক্ষায় যা যা করণীয় তা করতে প্রস্তুত আছি। মনোনয়ন পেলে এ আসনে ধানের শীষের জয় উপহার দিতে পারব। – যুগান্তর


শর্টলিংকঃ