Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

‘ফেল্টুশ’ সন্তানের ভর্তি নিশ্চিত করতে পোষ্য কোটা


শিক্ষকেরা হয়ত এসব নিয়ে কথা বলেন না। আখেরে এতে তাদেরই লাভ। কিন্তু আমি অবাক হই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নীরবতা দেখে। তাদের কি কিছুই বলার নেই? মেধাবী ছাত্ররা বাদ পড়ে যাবে। আর ফেল্টুশ অপোগন্ডরা ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াবে বিনা প্রতিবাদে- তারা এটা মেনে নেয় কীভাবে ?

এমন একটা সময় ছিল যখন এস এস সি অথবা এইচ এস সি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত কোন ছাত্র/ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ পেত না। এমন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ‘কামেল’ উপাচার্য তার ৩য় বিভাগপ্রাপ্ত সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য এলান জারি করলেন যে শিক্ষক-সন্তানদের এস এস সি/ এইচ এস সি তে ৩য় বিভাগ থাকলেও তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।

শুধু তাই নয়, সন্তানের ভর্তি নিশ্চিত করতে প্রবর্তন করলেন ‘পোষ্য কোটা’। অনেকে এর প্রতিবাদ করলেন। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে উপাচার্য মহোদয় পরের বছর থেকেই ৩য় বিভাগের এই সুবিধা প্রত্যাহার করে নিলেন। তার সন্তান তো ভর্তি হয়েই গেছে- সুতরাং এই সুবিধার আর প্রয়োজন রইল না, কিন্তু রয়ে গেল পোষ্য কোটা। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা চরম আকার ধারণ করেছে।

আমরা যখন ভর্তি হলাম তখন ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, বায়োকেমিস্ট্রি এসব বিভাগে ভর্তির জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স, ফার্মেসি, ট্রিপল ই এবং আরও বেশ কিছু বিভাগ। যেখানে ৮০/৮২ নম্বর পেয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এসব বিভাগে ভর্তি হতে পারেনি, সেখানে মাত্র ২৫ এমন কি মাত্র ১৫ নম্বর পেয়েও শিক্ষকের সন্তানেরা এইসব ‘প্রাইজ’ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। শুধু কি তাই? স্কুল কলেজে যারা ঠিকমত পাস করতে পারত না, বাপ/চাচার বিভাগে ভর্তি হয়ে তাদের মেধার এমন বিস্ফোরণ দেখা দিল যে একেক জন্য ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট গোল্ড মেডালিস্ট হয়ে বেরোতে লাগল।

তামাশা বলে কাকে? শুধু কি তাই? আমি একজন প্রভাবশালী প্রফেসরকে চিনি যে কোন রকম ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই বাপের বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এবং আজিব তেলেসমাতিতে ফাটাফাটি রেজাল্ট করেছেন। আল্লাহ আর কিছুদিন হায়াত দিলে তাকে উপাচার্যের পদে দেখে যেতে পারব- ইনশা আল্লাহ। একটি তদন্ত কমিশন গঠন করুন- তথ্য প্রমাণ সহ সাক্ষ্য দেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা থাকতে পারে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি নিজেদের তাই ভাবেন? নাহলে এমন এক ঘৃণ্য প্রথা বছরের পর বছর চলে আসছে কীভাবে? এর ফলে শিক্ষকদের যে সমস্ত সন্তান প্রকৃত মেধাবী তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা সত্যিকার ভালো ফল করলেও এক ধরনের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর শিক্ষক অপরাজনীতির যুপকাষ্ঠে যেসব মেধাবী শিক্ষক-সন্তান বলি হয়েছেন- তাদের সংখ্যাটিও কিন্তু নগণ্য নয়।

ভর্তি পরীক্ষার এত নাটক আর রেজাল্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এর এসব কলাকৌশল বাদ দিয়ে আমার সেই স্যারের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলুন, জীবনে যদি আর কিছু করে খেতে না পারিস, তোরে ভার্সিটির মাস্টার বানায় দেবোনে। যারা বেতন তোলার জন্য নাম দস্তখত করতে জানে তাদের এডহকে সরাসরি প্রফেসর পদে নিয়োগ দিয়ে দিন- ল্যাঠা চুকে যাক।

প্রফেসর ড. রহমতউল্লাহ ইমন : বল স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র


Exit mobile version