ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করায় রাবি শিক্ষক গ্রেফতার


নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কটূক্তির  অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে তাকে  গ্রেফতার করা হয়। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক।  তিনি  নিজ জেলা নড়াইলের আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। 

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের  যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস কুমার সাহা বাদী হয়ে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়।

দায়েরকৃত মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, কাজী জাহিদুর রহমান গত ১, ২ ও ৫ জুন নিজের ফেসবুক ওয়ালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন। বাজে ভাষায় কটূক্তি করেন তিনি। সেখানে একটি পোস্টে মোহাম্মদ নাসিমের ছবি ও নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি পোস্টগুলোতে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করা হয়।

এজহারে আরো বলা হয়, মোহাম্মদ নাসিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও সংক্ষুব্ধ।

এরপর গত ১৫ জুন বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

 

প্রসঙ্গত, গত ১ জুন রাতে মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ‘তাঁর অসুস্থতা নিয়ে’ ব্যঙ্গ করে নিজের ফেসবুকে স্টাটাস দেন শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমান।

সেই স্টাটাসে সরাসরি মোহাম্মদ নাসিমের নাম উল্লেখ না থাকলেও স্পষ্ট তাঁকে ইঙ্গিত করে ‘বিষোদাগার’ করার অভিযোগ ওঠে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে ‘উগ্র’ ভাষা ব্যবহার করে জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিমকে তিনি পরামর্শ দেন- ‘করোনাকে ঘুষ দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসার’!

পরদিন ২ জুন বিকেলে ফের স্টাটাস দেন কাজী জাহিদুর। সেখানেও নাম উল্লেখ না করে চিকিৎসা খাত নিয়ে সমালোচনা করেন। ‘তাঁর আমলে’ শব্দের ব্যবহারে কৌশলে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করেন।

সেখানে ‘অসুস্থ নাসিমকে’ ইঙ্গিত করে অক্সিজেনের পরিবর্তে তাঁকে কার্বনডাইঅক্সাইড দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। আর ৫ জুন ‘কাজ করে না এমন ভেন্টিলেটর দিয়ে শ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক’ এমন বাক্যও লেখেন কাজী জাহিদুর। ওই স্টাটাসে সবশেষে নাসিমকে ইঙ্গিত করে ‘এসব চোর’ বলে সম্বোধন করা হয়।

ওই পোস্টগুলো প্রথমে সেভাবে সামনে না আসলেও মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক একই ধরনের অভিযোগে গ্রেফতারের পর এটা নিয়েও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুরের শাস্তির দাবিও তুলেছেন তারা।


শর্টলিংকঃ