বগুড়ায় নারী শ্রমিকদের চাহিদা বাড়লেও কমছে না বৈষম্য


বগুড়া প্রতিনিধি :

কম মজুরিতে নারী শ্রমিকদের খুঁজছে মালিকপক্ষ। অর্থনীতির পরিভাষায় চাহিদা বেড়ে গেলে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ নারী শ্রমিকদের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও পায়নি মজুরি বৃদ্ধি। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার রোষানলে পিষ্ট হচ্ছে নারীর শ্রমের অধিকার। শুধু মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রদর্শনই নয়, কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নারী মজুররা বিভিন্নভাবে মালিক পক্ষের হয়রানির শিকারও হয়ে থাকেন। লোকলজ্জা ও কাজ হারানোর ভয়ে, তারা সেগুলো প্রকাশ করতে পারেন না বলছেন সচেতন মহল।

নন্দীগ্রামে বেরো ধানের চারা রোপনের জন্য বীজতলা থেকে তুলছেন পুরুষদের সঙ্গে নারী শ্রমিকরাও।

ইরি-বোরো ধান রোপণের ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চলছে জমি থেকে আলু উত্তোলনের কাজ। এ কারণে বগুড়া জেলাজুড়ে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এ অবস্থাতেও বৈষম্যের শিকার বগুড়ার নারী শ্রমিকরা।

জানা গেছে, একমাস আগেও কৃষি শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে শহরে রিকশা চালাতে আসতেন। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে এখন ৫০০ টাকা মজুরির সঙ্গে দুই বেলা খাবার দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই নারী শ্রমিকদের মাঠের কাজে ব্যবহার করছেন।

বগুড়া সদরের তেলীহারা গ্রামের মাঠে আলু উত্তোলন করতে দেখা যায় একই গ্রামের মনোয়ারা, সাহেরা, বেলীর মতো অনেক নারী শ্রমিককে। তারা জানান, পুরুষ শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় জমির মালিক তাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জমি থেকে আলু তুলে দিয়ে এই নারী শ্রমিকরা পাবেন প্রত্যেকে মাত্র ১৫০ টাকা।

এদিকে ওই নারী শ্রমিকদের পাশের জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণের জন্য জমি চাষ করছেন লাল মিয়া। তিনি জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জমিতে কাজ করে মজুরি পাবেন ৪৫০ টাকা। এছাড়াও সকালে এবং দুপুরে জমি মালিকের বাড়িতে ভাত খাবেন।

নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে এই বৈষম্যের বিষয়ে কৃষক খয়বর আলী জানান, পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকদের কাজের গতি কম। এছাড়াও যে সকল নারী বাড়িতে বসে সময় কাটায় তারাই মূলত মাঠে কাজ করে থাকে। এই অঞ্চলে নারী শ্রমিকরা কৃষি জমিতে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করেন না। যার কারণে তাদের মজুরিও কম দেয়া হয়।

কাহালু উপজেলায় আলু ক্ষেতে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।

বগুড়া সদরের মহিষবাথান গ্রামের মাঠে কাজ করা কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, তারা নিয়মিত মাঠে কাজ করেন না। তবে আর্থিক সমস্যা এবং পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি বাড়তি আয় যোগাতে মৌসুমের সময়ের মাঠের কাজে নামেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজ বাড়ির আশেপাশের জমিতে কাজ পেলে মজুরীভিত্তিক কাজ করে থাকেন।

গোকুল গ্রামের কৃষক ফজর আলী জানান, এখন শ্রমিক সংকট চলছে। পুরুষ শ্রমিকের দাম অনেক বেশি। এদিকে বাজারে আলুর দাম তেমন নেই। এ কারণেই তারা নারী শ্রমিককে কম দামে কাজে লাগিয়ে পুষিয়ে নিতে চান।

জানা গেছে, বগুড়া শহরের নামাজগড়, কলোনি, ফতেহ আলী মোড় এলাকায় প্রতিদিন শ্রমজীবী মানুষে হাট বসে। এসব স্থানে কেউ আসেন নিজের কায়িক শ্রম বিক্রি করতে, আবার কেউ আসেন এসব মানুষের শ্রম কিনতে। একমাস আগেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। সেই মানুষগুলোকে এখন সকাল ৮টার পর আসলে আর দেখা যায় না। এ অবস্থা চলবে আরও এক মাস।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা সুমি ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মাহফুজা বেগম জানান, নারী ও পুরুষ সমানে সমান। নারী শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন। নারী যেহেতু পুরুষের তুলনায় কাজ বেশি করে থাকেন, সেহেতু তাদেরকে মজুরি কম দেয়া চলবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। তবে অনেকাংশে নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্যে হ্রাস পেয়েছে বলেও জানান তারা।


শর্টলিংকঃ