বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে জিয়ার ‘ইন্ডেমনিটি’ নিয়ে মঞ্চনাটক


বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের হত্যাকারীদের দায় মুক্তি দিতে জিয়াউর রহমান সরকার করেছিলেন ইন্ডেমনিটি আইন। এই সমালোচিত আইন নিয়ে তৈরি হয়েছে নাটক ‘ইন্ডেমনিটি’। মান্নান হীরার রচনায় এ নাটক পরিচালনা করেছেন বরেণ্য অভিনেতা আজিজুল হাকিম। নাটকটি মঞ্চায়ন করছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। এর সার্বিক ব্যবস্হাপনায় আছেন তারানা হালিম। তিনি  জানান, আজ ১২ নভেম্বর থেকে মঞ্চে আসছে নাটক ‘ইন্ডেমনিটি’। বেশ কিছু মঞ্চে এটি প্রদর্শিত হবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

নাটকটিতে নির্দেশনার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম। আরও রয়েছেন ফরিদা ছন্দা, জয়রাজ, আমান পারভেজ মুরাদ, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল জাকারিয়া প্রমুখ।

তারানা হালিম জানান, ‘ইন্ডেমনিটি নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আজ ১২ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায়।’

‘নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ১৩ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় ও তৃতীয় প্রদর্শনী হবে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ১৫ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায়’- যোগ করেন সাবেক মন্ত্রী তারানা।

ইন্ডেমনিটি নাটকটি নিয়ে এই অভিনেত্রী আরও জানান, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হিসেবে এই নাটকটির সার্বিক তত্বাবধানে আছি আমি। এই নাটকটির উদ্দেশ্য ইন্ডেমনিটি সম্পর্কে মানুষকে জানানো। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা জানুক স্বাধীন বাংলাদেশে আইন নিয়ে কী ঘটনা ঘটেছিলো।

অনেকে জানে না ইনডেমনিটি কী? এই আইনের মাধ্যমে যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো এই বিষয়টি অনেকের অজানা।

জিয়াউর রহমানের শাষণ আমলে এই আইন পাশ হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে এই আইন বাতিল করেছে। প্রথমে খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে দিয়ে জিয়াউর রহমান এই অধ্যাদেশ জারি করান। এরপর এই আইন সংসদে পাশ করা হয়।

সামরিক শাসনের সময় জারি করা কোনো আইন কোনো ট্রাইব্যুনালে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলে পঞ্চম সংশোধনী এনে ওই আইনটিকে বৈধতা দেওয়া হয়। এই আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আমাদের দেশের আইনে সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আদেশ আছে। ইন্ডেমনিটি আইন করে এই বিচার পাবার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। ইন্দিরা গান্ধী, মহত্মা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, আব্রহাম লিংকন কারো হত্যাকান্ডের হত্যাকারীদের দায় মুক্তি দেওয়ার নজির নেই।’

তারানা হালিম আরও বলেন, ‘আব্রাহাম লিংকনের হত্যকাণ্ডের বিচার হয়েছিলো তার মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে, মহত্মা গান্ধীর হত্যাকারীদের বিচারের রায় হয়েছিলো ২ মাসের মধ্যে। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার বিচারের রায় হয়েছিলো ৪ বছরের মধ্যে। আর ১৯৭৫ সালের আমাদের জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছিলো তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে জাতিকে। হত্যাকারীদের ইমডিনিটি দেওয়া, মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটা কলঙ্কজনক অধ্যায়।

যারা এটা করেছে, মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার যারা কেড়ে নিতে চেয়েছে তাদের সেই ইতিহাস মান্নান হীরা অসাধারণভাবে নাটকে তুলে ধরেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট থেকে এই নাটকে তিনটি প্রদর্শনী করছি। তৃতীয় দিনের শো’তে উপস্থিত থাকেবেন আইনমন্ত্রী। এখন থেকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই নাটকটির শো করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এই নাটকের মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী ‘ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ’ আইনটি বাতিল করতে সেই সংসদের আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ‘দি ইন্ডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেন।

অবশেষে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই আজ ১২ নভেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করলো ‘ইন্ডেমনিটি’ নাটকটি।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা অনেকেই শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। তবে মেজর জিয়ার সরকার জাতির পিতার হত্যার বিচার না করে খুনিদের সরকারি ওপর মহলে ও বিদেশের দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করে। তারা অনেকে পালিয়ে যায় নানা দেশে।

এখনো পালিয়ে আছে। জাতির পিতার খুনিদের মধ্যে এখনো পলাতক রয়েছে খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান।


শর্টলিংকঃ