বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী কলেজের জন্মদিন উদযাপন


নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজের জন্মদিন আজ (সোমবার)। প্রতিষ্ঠার ১৪৬ বছর পেরিয়ে ১৪৭ বছরে পা রাখলো এই কলেজটি। বর্ণাঢ্য আয়োজনে কলেজটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় কলেজ মাঠে বেলুন উড়িয়ে ও কেক কেটে দিবসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান।

‘প্রমত্তা কালের খেয়ায় কাটলো যে দিন, পেরিয়ে বছর মাস শুভ জন্মদিনে আজ প্রাণের উল্লাস’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবে মেতে ওঠে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুভাকাঙ্গীরা। পরে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়।

অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের নেতৃত্বে র‌্যালিটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলেজ মাঠে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।

জানা যায়, ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহী শহরে ‘রাজশাহী কলেজ’ নামে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বীজবপন করা হয়েছিল, তা আজ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। মাত্র ছয় জন ছাত্র নিয়ে পথচলা শুরু করে বর্তমানে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয় এই কলেজ।

প্রমত্তা পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৩৬ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজশাহী কলেজ মানেই পরিপাটি ক্যাম্পাস। পড়ালেখা, আড্ডা, গল্প আর গান সবকিছু চলছে একসঙ্গেই। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষায়তন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুই ক্যাটাগরিতেই পরপর তিনবার দেশ সেরা কলেজ নির্বাচিত হবার পাশাপাশি দেশের মডেল কলেজের স্বীকৃতি পেয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুধু লেখাপড়ায় নয়, কী ভাষা আন্দোলন, কী মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালীর সকল গৌরবোজ্জল ইতিহাসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে রাজশাহী কলেজের নাম।

আজ থেকে ১৪৭ বছর আগে যার জন্ম হয়েছিল জমিদার রাজার হাতে। তারপর কত উজ্জ্বল নক্ষত্র এখানে এসেছেন, নিজেকে গড়েছেন, আবার কালের বিবর্তনে আলো বিলিয়ে চলে গেছেন। সেই আলোতে আজও পথ চলে নতুন প্রজন্ম।

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, উপমহাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি স্যার যদুনাথ সরকার, বৈজ্ঞানিক প্রথায় ইতিহাস চর্চার পথিকৃত অন্যতম সাহিত্যিক অক্ষয় কুমার মৈত্র, সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান, জননেতা ও শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ এবং বাংলাদেশের জাতীয় নেতার একজন এএইচএম কামারুজ্জামানের মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এ কলেজের ছাত্র ছিলেন।

বর্তমানে রাজশাহী কলেজ একবিংশ শতাব্দির প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল করে নিয়েছে নিজেকে। কলেজের নিরাপত্তা বিধান করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা, শ্রেণিকক্ষকে মাল্টিমিডিয়ায় রুপান্তর, প্রত্যেক বিভাগে ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট সংযোগ, সান্ধ্যকালীন লাইব্রেরী সেবাসহ কলেজের যাবতীয় তথ্য প্রদর্শনের জন্য প্রশাসন ভবনে লাগানো হয়েছে এলইডি সাইনবোর্ড।

শুধু অ্যাকাডেমিক পড়শোনা নয়, কলেজকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ডাস্টবিন। ঘোষণা করা হয়েছে ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস। গাছে লাগানো হয়েছে নামফলক। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছে ফুলের বাগান।

কলেজ প্রশাসন ভবনের সামনে রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যময়ী স্থান সমূহের ছবি সহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন সংস্কৃতি টাইলসের উপর চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘রাজশাহীর চোখ’। তার পাশেই আছে শহীদদের স্বরণে নির্মীত শহীদ মিনার। যার পিছনে বর্ণমালা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘রক্তভেজা বর্ণমালা’।

এখানে আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করা হয় বিভিন্ন দিবস-উৎসব। রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রোভার স্কাউটস, মিরর ইংলিশ ডিবেটিং ক্লাব, বিএনসিসি, বাঁধনসহ প্রায় ৪০টির অধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ-শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী কলেজে। এছাড়া ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনারটিও এই কলেজে।

সকালবেলা কলেজ চত্তরে পা রাখলেই দেখা যায় আগামীর কর্ণধারদের জন্য নির্মল সবুজ ক্যাম্পাস যেন তার শিশির ভেজা আঁচল বিছিয়ে রেখেছে। সকাল বেলা সবাই ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে আড্ডা। দুপুর না গড়াতেই পুরো কলেজ যেন তারুণ্যের মিলন মেলায় পরিনত হয়। ক্লাসের পাঠ চুকে তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যেন কলেজে আসার মূল আনন্দ হয়ে উঠে।

এদিকে,


শর্টলিংকঃ