- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

বাঁধনের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ হয়ে উঠার গল্প


ইউএনভি ডেস্ক: 

বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর কান উৎসবের ৭৪তম আসরে বাংলাদেশের নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ স্থান পেয়েছে আঁ সার্তে রিগার্দ বিভাগে। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।

১৯ বছর আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রথমবার এসেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০০২ সালে প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিল। সেই সময় এই বিভাগে ২৪টি চলচ্চিত্র অংশগ্রহণ করে। বাকি ২৩টি চলচ্চিত্রকে পেছনে ফেলে ‘মাটির ময়না’ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট পুরস্কারটি অর্জন করে।

দীর্ঘ ১৯ বছর পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য সুখবরটা এলো। উৎসবের ৭৪তম আসরে দেশের নবীন নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ জায়গা করে নিয়েছে কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে। ফলে ইতিহাস গড়লেন এই নির্মাতা। সঙ্গে সবার আলোচনার অংশ হলেন ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধন। কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে নিজের অভিনীত ছবি প্রদর্শনের খবরে আত্মহারা বাঁধন। ফোনের ওপাশ থেকে বাঁধন বলেন, ‘খবরটি পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত। কতটা আনন্দিত, সেটা অনুমান করতে পারবেন না। একই সঙ্গে গর্বিতও।

বাংলাদেশের নাম যে সিনেমার মাধ্যমে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছল, সেই ছবির আমিও যে একটা অংশ।’ বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র যে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময়ে আন্তর্জাতিক এমন স্বীকৃতি পাওয়া যেন অস্কার থেকেও কোনো অংশে কম নয়! কান উৎসবের ‘আঁ সার্তে রিগার্দ’ বিভাগে লড়াই করবে সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। কানের ‘আঁ সার্তে রিগার্দ’-এর অর্থ ‘ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে’।

এই বিভাগে অপ্রথাগত শৈলী ও গল্পকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি তরুণ মেধাবী নির্মাতাদের উৎসাহিত করা হয়। একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে এই ছবির গল্প। ছবিতে কাজের শুরু কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, ‘২০১৯ সালের শুরুর দিকে ফেসবুকে আমার কিছু ছবি দেখে ছবির নির্মাতা এবং ছবির কাস্টিং ডিরেক্টর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর চরিত্রটির জন্য অডিশনে অংশ নিই। নির্বাচিতও হই। কিন্তু সেই সময় আমি খুব স্নায়ুচাপের মধ্যে ছিলাম। কারণ, চরিত্রটি করতে পারব কিনা!

 

পরে নির্মাতা আমাকে চরিত্রটি নিয়ে ভাবতে বললেন। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রিহার্সাল করেছি। শুটিং, ডাবিংসহ কাজটিতে প্রায় দেড় বছরের মতো সময় লেগেছে। এই সময়ে অন্য কাজে অংশ নিইনি। এমনকি এই ছবিটির কথাও কাউকে বলিনি। কারণ, এই ছবিটি আমার জীবনের অন্যতম একটি কাজ বলে মনে করেছি। ছবিটির দৃশ্যধারণ যখন করেছি, সেই সময় পরিচালকসহ পুরো ইউনিটের সবাই দারুণ পরিশ্রম করে কাজটি করেছেন। এভাবে কাউকে কখনও দেখিনি। পরিচালক আমাকে রেহানা চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করেছেন। ছবিটির কাজ যখন করেছি, সেই সময় অন্য কোনো কাজ করিনি। তখন অনেকেই বলেছেন, ‘বাঁধন হারিয়ে গেছে।’ আর যারা জানতেন ছবিটির কথা, তাদের অনেকেই বলতেন, একটা সিনেমার জন্য এত সময়! তুমি পারও বটে!

তখন তাদের কিছু বলতে পারিনি। মনে বিশ্বাস ছিল ভালো কিছু হবে। এখন সেই প্রাপ্তিটা পেলাম। আন্তর্জাতিক এই আয়োজনে বাংলা ছবির অভিনেত্রী হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন- কেমন লাগছে? উত্তরে বেশ বিনয়ী বাঁধন। বললেন প্রতিটি চরিত্রের কথা।

তার ভাষ্যে, ‘আমি কেবল এই ছবির একটি অংশ মাত্র। আমি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছি, এটা ঠিক। কিন্তু এই ছবির প্রতিটি চরিত্র ভীষণ ইমপ্যাক্টফুল। যে কোনো একটি চরিত্র বাদ দিলে ছবির গল্প পরিণতি পাবে না। শুধু অভিনয়শিল্পীই নয়, এই ছবির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের সমান অবদান রয়েছে।’

বাঁধন মনে করেন, গত দুই বছর তিনি এই ছবির জন্য সময় ব্যয় করেছেন। এটি ছিল তার জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ তিনি মনে করেন, মানুষের জীবনে সব সময় সব ধরনের সুযোগ আসে না। বাঁধন বলেন, ‘এটা আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। বুঝতে পেরেছিলাম, এমন সুযোগ জীবনে আর হয়তো আসবে না। তাই কাজে লাগিয়েছি। এখানে আমার যদি কিছু অবদান থাকে, সেটা আমার বিশ্বাস, পরিশ্রম, সময়, সঙ্গে অনেক কিছুর ত্যাগ।

‘ জানা গেছে, ছবিটিতে কাজের সময় একটা স্কুলিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাঁধনকে। এমন একজন তরুণ পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন, যিনি প্রচারবিমুখ। বাঁধন বলেন, ‘আমি যখন থেকে এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, তখনই বুঝেছি পরিচালক খুব মেধাবী। তিনি জানেন, আসলে কী করতে চাইছেন। এমন একটি টিমের সঙ্গে কাজ স্টু্কলিংয়ের মতো। তারপরও কানের মতো সম্মান বয়ে আনবে, সেটি তখনও প্রত্যাশা করিনি।’