- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

বাংলাদেশি বাবা-মেয়ের ভক্ত বিল গেটস


ইউএনভি ডেস্ক:

বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন আনতে অনন্য ভূমিকা রাখছেন দুই বাংলাদেশি। তারা সম্পর্কে বাবা-মেয়ে। শিশু মৃত্যুর হার বেশি এমন স্বল্পোন্নত দেশ ও সম্পদশালী দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবধান কমাতে কাজ করছেন ডা. সমীর সাহা ও তার মেয়ে ডা. সেঁজুতি। স্বাস্থ্য খাতে বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখা এ দুই বিজ্ঞানীর ভক্ত দুনিয়ার সেরা ধনী বিল গেটস।

ডা. সেঁজুতি সাহা ও তার বাবা ডা. সমীর সাহা। ছবি: সংগৃহীত

ডা. সমীর সাহা ঢাকা শিশু হাসপাতালের অণুজীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। তিনি গড়ে তুলেছেন শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ)। এতে কাজ করছেন সমীরের মেয়ে ডা. সেঁজুতি। শিশু মৃত্যুর হার বেশি এমন স্বল্পোন্নত দেশ ও সম্পদশালী দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবধান কমাতে তারা বর্তমানে কাজ করছেন। তাদের নিয়েই একটি ব্লগ পোস্ট লিখেছেন বিল গেটস।

যখন সেঁজুতি সাহা বাংলাদেশে বেড়ে উঠছিলেন, দেখতেন, রাতে খাবার টেবিলে পারিবারিক আলোচনায় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও সংক্রামক রোগ নিয়ে আলাপ হচ্ছে।

খাবারের সময় এসব বিষয়ে আলোচনা অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু তার বাবা ডা. সমীর সাহা নিজের কাজ বাড়িতে নিয়ে এলে এমনটিই ঘটত।

তিনি নিজের বিজ্ঞান বক্তৃতার অনুশীলন করতে পারিবারিক খাবার টেবিলকে ব্যবহার করতেন কিংবা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিকূলতা নিয়ে যা তিনি জানতে পেরেছেন, তার পরিবারের সবাইকে বলতেন (ওই টেবিলে যদি আমার জন্য একটি চেয়ার থাকত— রোগব্যাধি নিয়ে জানতে আমি ভালোবাসি।)

এসব আলোচনা সেঁজুতির ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। এর পর নিজেকে একজন অণুজীববিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে তুলেন তিনি। ডা. সেঁজুতি সাহা বর্তমানে তার বাবার সঙ্গে শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) নামের একটি সংস্থায় কাজ করছেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শিশু মৃত্যুহার কমাতে তার বাবা এ প্রতিষ্ঠানটি গড়তে সহায়তা করেন।

সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপাত্ত, অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ও টিকাদানকে ব্যবহার করছেন তারা। তাদের গবেষণা কেবল বাংলাদেশেই নয়, একই ধরনের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিকূলতার মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ব্যবহার করছে।

সরকারের শিশু রোগপ্রতিষেধক ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সিএইচআরএফের কাজের কল্যাণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার অব্যাহতভাবে কমে আসছে। এ ছাড়া সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটেছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ মানুষ টিকাদান কর্মসূচির আওতায় চলে এসেছেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের অণুজীববিদ্যা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সমীর। শিশুদের বড় দুই ঘাতক মেনিনজাইটিস ও নিউমোনিয়ার টিকা ব্যবহারে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলোতে এসব টিকা সহজলভ্য। কিন্তু বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে তা সহজে পাওয়া সম্ভব হয় না।

এসব রোগের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত নথিভুক্ত করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। রোগ দুটির টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে ডা. সমীরের দেয়া তথ্য-উপাত্ত দারুণ সহায়ক হয়েছে জনস্বাস্থ্য নীতিনির্ধারকদের, যা ইতিমধ্যে হাজারো মৃত্যু কমাতে সক্ষম হয়েছে।

দরিদ্র দেশগুলোর নবজাতক ও শিশুদের আক্রান্ত হওয়া রহস্যজনক রোগ শনাক্ত করতে সহজতর উপায় বের করতে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন সেঁজুতি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে মেনিনজাইটিসের প্রকোপ বেড়ে গিয়েছিল। যার কোনো ব্যাখ্যা মিলছিল না। শিশুদের জিনগত উপাদান বিশ্লেষণ করে সেই রহস্যের জট খোলেন সেঁজুতি। (তিনি দেখতে পান, চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রাদুর্ভাবেই মেনিনজাইটিসের প্রকোপ, আর মশা থেকে এই ভাইরাসের বিস্তার।) কিন্তু রহস্যের কিনারে পৌঁছাতে, রোগের নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান বিশ্লেষণের জন্য।

তখন থেকে ভবিষ্যতে মেনিনজাইটিসসহ অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাবের দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশে স্বল্প-খরচের রোগনির্ণয় উপকরণ বের করেন তিনি। বাবা-মেয়ে তাদের গবেষণা থেকে যে তথ্য পেয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় দেশটির অনেক সম্পদেরই ঘাটতি রয়েছে।

সিএইচআরএফের সংগৃহীত তথ্য রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে সরকারের নীতিনির্ধারণে সহায়তা করছে। নতুন টিকা উদ্ভাবনেও কাজে লাগানো হচ্ছে এসব তথ্য।

বাংলাদেশে অবস্থার উন্নতি ঘটলেও দেশটিকে আরও বহুদূর যেতে হবে। চলতি বছরের গোলকিপার অনুষ্ঠানে একটি প্রভাবশালী গল্প শুনিয়েছেন সেঁজুতি। তাতে বাংলাদেশে এখন বিদ্যমান ব্যাপক স্বাস্থ্য প্রতিকূলতার কথা উঠে এসেছে। শিশুদের চিকিৎসায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ঢাকা শিশু হাসপাতাল। ৬৬৫টি শয্যা রোগীতে পূর্ণ থাকায় বছরে ছয় হাজার শিশুকে ভর্তি না হয়ে ফিরে যেতে হয়।

প্রতিরোধযোগ্য রোগে আক্রান্ত অনেকে এসব শয্যায় ভর্তি হয়ে থাকে। কিন্তু তাৎক্ষণিক চিকিৎসার দরকার হলেও অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ যদি বেশি কিছু করতে পারে, তবে প্রতিরোধ করা যায় এমন সব অসুস্থতার দিকে আরও মনোযোগ দেয়ার জন্য তার সম্পদ কাজে লাগাতে পারবে।

সমীর ও সেঁজুতির কাজের কল্যাণে বাংলাদেশ এমন এক ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে সংক্রামক ব্যাধি কমে আসবে। আর চিকিৎসার জন্য খালি থাকবে হাসপাতালের শয্যা।