Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

বাগমারার বনবন্ধু জাহিদুরের অভিনব প্রতারণা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাহিদুর রহমান ইকবাল (৭০) নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘বনবন্ধু’ নামে। ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে মুজিববর্ষের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত চিঠি দিয়ে গাছ লাগানোর কথা বলে প্রতারণা করে আসছিলেন কথিত এ ‘বনবন্ধু’।

পুলিশ বলছে, এই অভিনব কায়দার প্রতারণায় জাহিদুর রহমান হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিজেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। এছাড়া ব্যাংক লোন নিয়ে দেওয়ার কথা বলেও অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

তদন্তে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ২৭০টি সিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল ১৮৪টি, মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সংবলিত চিঠি ৫০০টি, সিপিইউ দুটি, প্রিন্টার দুটি, স্ক্যানার একটি, মনিটর দুটি, ল্যাপটপ একটি, মোবাইল দুটি ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর ধরে কারওয়ান বাজার এলাকায় বনবন্ধু হিসেবে জাহিদুর রহমান ইকবাল প্রতারণা করে আসছেন। মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করাই বর্তমানে তার মূল প্রতারণা। সে প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এর মাধমে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রতারক বনবন্ধু জাহিদুর ট্রি প্লান্টেশনের (বৃক্ষরোপণ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। মুজিববর্ষে সে বিভিন্ন জায়গা গাছ লাগাবেন বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।’

প্রতারক জাহিদুর নিজের গাড়িতে লাগিয়ে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি
ডিসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘জাহিদুর রহমান প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। অবৈধভাবে সিল তৈরি ও সংরক্ষণ করে প্রতারণার উদ্দেশে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করেছেন। সেসব ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পাঠিয়েছেন। কনসালটেন্ট গ্রুপ লিমিটেড, এসএম ই কনসালটেন্ট লিমিটেড, ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেডের নামে তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। যদিও তিনি এসব কোম্পানির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন লোন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি।’

গাড়িতে ব্যবহার করতেন জাতির পিতার ছবি

জাহিদুর রহমান ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতির পিতার ছবি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করতেন। যা জাতির পিতার ছবির অবমাননার শামিল। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আয়করের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে লোন প্রসেসিং, বাংলাদেশ ট্রি-প্লান্টেশন ফাউন্ডেশন নামে নামসর্বস্ব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে বৃক্ষরোপণের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন।’

ডিসি হারুন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা যখন তার কাছে গেলাম তখন তিনি বলে, আপনাদের যে পুলিশ ব্যাংক সেটা তো আমার কন্সালটেন্সি ফার্ম করে দিয়েছে। সেটাও নাকি বিনা পয়সায় করে দিয়েছেন।’

কী পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন- জবাবে ডিসি বলেন, ‘৫০০ লোকের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা করছি। আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করব। জিজ্ঞাসাবাদেই স্পষ্ট হবে কত লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন?’


Exit mobile version