বাঘায় পদ্মার ভাঙনে ঠিকানার সন্ধানে ছুটছে অর্ধশত পরিবার


আমানুল হক আমান, বাঘা:
পদ্মার অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়েছে অর্ধশত পরিবার। তারা ঘর-বাড়ি গুছিয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এমনি ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের মানুষের ভাগ্যে।


গতকাল রোববার (২৫ আগষ্ট) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগর চরের মান্নান মন্ডল, মিজানুর রহমান, সামাদ মালিথা, হানে ফকির, হাফিজুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, হানু কাজী, সাইদুল ইসলাম, মজনু মোল্লা ও চকরাজাপুর চরের হাসান শেখ, জব্বার মন্ডল, হিরো মন্ডল, শাহিনা বেগম, ফজলু শিকদার, আকতার মন্ডল, রহমান মোল্লা হাফিজুর রহমানসহ ৩০টি পরিবার ভিটে মাঠি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

তাদের মতো ভাঙন আতঙ্কে ঠিকানা খুঁজছেন চকরাজাপুর চরের আরো অর্ধশতাধিক পরিবার। ঠিকানা হারিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়েও দুঃচিন্তা তাদের। পানি বন্দী হয়ে গবাদী পশু নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন কালিদাখালি, চকরাজাপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাস খালী, পূর্ব চকরাজাপুর, জোতাশি, মানিকের চর, লক্ষিনগর, টিকটিকিপাড়া, দিয়াড়কাদিরপুর, নওশারা-মহদীপুর চরের মানুষ। পদ্মার মধ্যে বাড়ি-ঘরে ছুঁই ছুঁই পানির আতঙ্কে রয়েছে তারা।


প্রমত্তা পদ্মার ফুলে ফেঁপে ওঠা পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে পদ্মার পাড়। পদ্মার আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউয়ে পাড় ভেঙে চকরাজাপুর ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভেসে গেছে গাছপালা। আর ৫০ গজ ভাঙলেই পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতের মোড় ও কিশোরপুর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে ঠেকবে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। তবে ভাঙন রোধে কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

স্থানীয় সবুর মল্লিক ও লিটন আলী জানান, নদী তীরবর্তী বাঁধের পশ্চিমপাড় থেকে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে পাড়ের মানুষ। আবাদি জমি ভাঙনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তাদের দাবি, নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে অরক্ষিত এলাকার আরও অনেক জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে।

চকরাজাপুর চরের মোস্তাক আহম্মেদ শিকদার বলেন, গত কয়েক দিনে রাক্ষুসী পদ্মা গিলেছে বিঘার পর বিঘা ধান, পাট, আবাদি জমি, গাছপালা। ভাঙনের শিকার এসব মানুষদের সহযোগিতা তো দূরের কথা শান্তনা দেবার মতও কেউ নেই। বারবার সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ভাঙন ঠেকানোর আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অব্যাহত ভাঙন থেকে বাড়ি-ঘর সরানোর তাড়ায় এসব পরিবারের ভালো খাবারের নিশ্চয়তাও নেই।

পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ার শওকত জামান বলেন, কয়েক দিনের পানির বৃদ্ধিও কারনে ফসলী জমিসহ গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছে অর্ধশতাধিক পরিবার। তারা এখন ঘরবাড়ি শরাতে ব্যস্ত।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, প্রতি বছর ভাঙ্গনে ভূমিহীন হয়ে পড়ছে নদী তীরের অনেক মানুষ। চলতি বন্যায় ৩০টি পারিবারের তালিকা তৈরী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, পদ্মার ভাঙনে ৩০টি পরিবারের তালিকা পেয়েছি। বরাদ্দ পেলে তাদের দেয়া হবে। তবে ভাঙ্গনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ