বাদী মামলা করেননি, সাক্ষী সাক্ষ্য দেননি, তারপরও আদালতে চার্জশিট!


ইউএনভি ডেস্ক:

মামলার বাদী বলছেন, আমি মামলা করিনি। সাক্ষীরা বলছেন, সাক্ষী দেইনি। অথচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাটির ক্ষেত্রে ঘটেছে এ ঘটনা। তাকে অভিযুক্ত করে গত ৩১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মিরপুর থানা পুলিশ।

মোজাম্মেল হকের দাবি, মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলাটি গায়েবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলার সময় আমার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করা হয়েছে। আমি নাকি চাঁদাবাজি করেছি। টাকা চেয়েছি। এগুলো মিথ্যে। আমি কখনও এধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত নই। আমার কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এ মামলাটি করা হয়েছে।’ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক। কথিত ‘চাঁদাবাজি’র মামলায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তার নাম।

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও দশ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন মো. দুলাল নামের এক ব্যক্তি। মামলা দায়েরের পর ৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার নিজ বাসা থেকে মোজাম্মেল হককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একদিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। গত ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে কারাগার থেকে মুক্ত হন ১৩ সেপ্টেম্বর।

মোজাম্মেল হককে গ্রেফতারের পর বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আসামিকে তিনি চেনেন না এবং তিনি কোনও পরিবহন নেতা নন। অথচ, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাদী দুলাল একজন পরিবহন নেতা। তার কাছে চাঁদা হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করেছিলেন আসামি মোজাম্মেল হক।

মামলার আট মাস পর গত ৩১ তারিখ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন মিরপুর থানার এসআই মো. সারোয়ার জাহান। এই তদন্ত কর্মকর্তা, মামলার সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তিনজনকে। তারা হলেন- পিরোজপুর বউডুবি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, দারুস সালামের বাপ্পী হোসেন ও ঝালকাঠির রামচন্দ্রপুরের আল-মামুন।

তবে যে তিনজনকে সাক্ষী হিসেবে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা সাক্ষ্য দেননি বলে জানিয়েছেন এবং চাঁদাবাজির ঘটনা তারা জানেন না। তারপরও কীভাবে সাক্ষী হিসেবে তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে তাও জানা নেই।

তিনটি আলাদা কাগজে তিনজন সাক্ষীর বক্তব্য চার্জশিটে উল্লেখ করা হলেও সবার বক্তব্য এক। শুধুমাত্র নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ভিন্ন। মামলার একজন সাক্ষী ঝালকাঠির রামচন্দ্রপুরের আল-মামুন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ঘটনা সম্পর্কেই জানি না। আমাকে কেন সাক্ষী করা হল, এটার উত্তর যারা আমাকে সাক্ষী বানিয়েছেন তারাই জানেন।’

যে ঘটনা সম্পর্কে আমি জানি না, সেই ঘটনার কীভাবে সাক্ষী হবো—পাল্টা এমন প্রশ্ন করে এই সাক্ষী বলেন, ‘আমি তখন এলাকাতেই ছিলাম না। একবছর আগে চাকরি জন্য পরিবহন নেতাদের কাছে ঘুরেছি। এরপর আর যোগাযোগ নেই। হঠাৎ শুনি সাক্ষী হয়েছি আমি। কোথাও স্বাক্ষর দিলাম না, কিছু বললাম না তারপর আমি কিভাবে সাক্ষী হয়েছি, এটা আমার বুঝে আসছে না।’

মামলার বাদী, সাক্ষী ও অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই মো. সারোয়ার জাহান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থানায় আসেন। ফোনে এত কথা বলা যাবে না।’ এরপরই কথা শেষ না করে ফোন লাইনটি কেটে দেন তিনি।

তবে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীদের যথাযথ সাক্ষ্য নিয়ে চার্জশিট দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির। তিনি  বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট দিয়েছেন। এখন কেউ যদি বলে যে, আমি সাক্ষী দেই নাই তাহলে সে আদালতে গিয়ে বলে আসুক, আমি সাক্ষী দেই নাই।

আদালতে চার্জশিট দাখিল করায় এখন মামলাটি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়েছেন আসামি মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, এর আগেও আমার বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক আইনে মামলা হয়েছিল। সেই অভিযোগ থেকে আদালত আমাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এবারও আমি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবো। আশা করি, সুবিচার পাবো আমি।


শর্টলিংকঃ