Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

‘বাবা বলেছিলেন— তোর ছেলে হবে স্বাধীন দেশের নাগরিক, নাম রাখবি জয়’


ইউএনভি ডেস্ক:

মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়ার পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন দেশ স্বাধীন হবে। আর সে কারণেই তিনি বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে তার প্রথম সন্তানের নাম ‘জয়’ রাখতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “তোর একটা ছেলে হবে, আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। তোর ছেলে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে, তার নাম রাখবি ‘জয়’।”


মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ধানমন্ডি-৩২ নম্বর থেকে কিছুটা দূরে একটি বাসায় পাকিস্তানি সেনা হেফাজতে মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে গৃহবন্দী থাকার স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তি পায় ১৬ ডিসেম্বর। আর আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম ১৭ ডিসেম্বর। কারণ আমার আব্বাকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর আমার মা, রাসেল, জামাল, রেহানা আমি গ্রেফতার হই। জামাল গেরিলা কায়দায় পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

উত্তাল সেসব দিনের কথা স্মরণ করতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, সেই দিনটির কথা বারবার মনে পড়ে। আমাদের কাছে শুধু একটা রেডিও ছিল। আমরা রেডিও শুনছিলাম। চারদিকে জয় বাংলার স্লোগান। আমরা তখন ছিলাম অবরুদ্ধ কিন্তু মুক্তপ্রাণ। আমরা ওখানে বসে রেডিও শুনতাম আর নিজেরাই জয় বাংলা স্লোগান দিতাম। ১৭ ডিসেম্বর সকালে মেজর অশোকসহ অন্যরা এসে আমাদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করে। ওই সময় আমরা যে বাড়িতে অবরুদ্ধ ছিলাম, সেখানে ছিল পাকিস্তানি পতাকা। আমরা মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা সেই পতাকা নামিয়ে এনে পায়ে দলে আগুন লাগিয়ে দেন।

বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়। ছেলের নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। সে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলতেন, এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। একাত্তরের ২৩ মার্চ, আমি তখন সন্তান সম্ভবা। ওই সময় আব্বার হাত-পায়ের নখ আমি নিজের হাতে কেটে দিতাম। ওইদিন বাংলাদেশের পতাকা তোলা হলো। আমাদের বাসা ৩২ নম্বরেও পতাকা তোলা হলো। তিনি পতাকা তুলে আসলেন, আমার কাছে বসলেন। আমি তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছিলাম। আমাকে বললেন, তোর একটা ছেলে হবে, আর সেই ছেলে স্বাধীন দেশে হবে। ছেলের নাম রাখবি ‘জয়’। আমি দেখে যেতে পারব কি না, জানি না। তবে তোর ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি। আমি আব্বার সঙ্গে সবসময় একটু বেশি কথা বলতাম। আমি বললাম, মেয়ে হলে নাম কী হবে? মেয়ের নাম দেন। তিনি মেয়ের নাম খুঁজতে গেলেন। খুঁজে-টুঁজে পছন্দ হলো না। বললেন, না, তোর ছেলেই হবে। তুই ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি। সে স্বাধীন দেশের নাগরিক হবে।


Exit mobile version