Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

বালাচাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন


দেশে বিলুপ্তপ্রায় বালাচাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছেনর (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। ইনস্টিটিউটের নিলফামারী জেলার সৈয়দপুর গবেষণা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রাশিদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শওকত আহমেদ এ কৌশল উদ্ভাবন করেন।


বালাচাটা মিঠাপানির বিলুপ্তপ্রায় একটি মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম সোমিলিপ্টস গনগোটা। যা অঞ্চলভেদে বালাচাটা, মুখরোচ, পাহাড়ি গুতুম, গঙ্গা সাগর, ঘর পইয়া, পুইয়া, বাঘা, বাঘা গুতুম, তেলকুপি ইত্যাদি নামে পরিচিত। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে মাছটি বালাচাটা, পুইয়া এবং পাহাড়ি গুতুম নামে বেশি পরিচিত। মাছটি খুবই সুস্বাদু, মানবদেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ এবং কাটা কম থাকায় খেতেও সহজ।

দেশের উত্তরাঞ্চলে মাছটি এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কিন্তু শস্য খেতে কীটনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে বাসস্থান ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্যতা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মাছটিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর কৃত্রিম প্রজনন, নার্সারি ব্যবস্থাপনা ও চাষের কলাকৌশল উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু হয় দেশে।

বিএফআরআই সৈয়দপুর গবেষণা উপকেন্দ্র সূত্র জানায়, বৃহত্তর রংপুরের চিকলী, বারাতি ও বুডিখরা নদী থেকে সুস্থ-সবল কিশোর বয়সের বালাচাটা মাছ (৫-৭ গ্রাম) সংগ্রহের পর মিনি পুকুরে মজুত করে নির্দিষ্টি মাত্রায় খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে চার থেকে পাঁচ মাস প্রতিপালন করে প্রজনন উপযোগী ব্রুড মাছ তৈরি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একই বয়সের পুরুষের চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্ত্রী মাছ আকারে বড় এবং দেহ প্রশস্ত হয়ে থাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক (৯-১৪ গ্রাম) বালাচাটা স্ত্রী মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা চার থেকে আট হাজার এবং প্রজননকাল এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, এটা অনেক বড় সফলতা। চাষের পাশাপাশি মাছটিকে অ্যাকুরিয়াম মাছ হিসেবে ব্যবহার করা হলে বাণিজ্যিকভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ২০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে বাজারে বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।


Exit mobile version