বিএনপি`র যাদের হাত ধরে বাংলাদেশে এলো `ক্যাসিনো কালচার`


গত ১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র‍্যাব। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‍্যাব।

কাউকে না পেয়ে ক্যাসিনোটি সিলগালা করা হয়। মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এসব অভিযানে মোট ১৮২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‍্যাবের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত জিরো টলারেন্সের ফলে দেশব্যাপী মাদক ও সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলছে শুদ্ধি অভিযান। আর এরমধ্যেই একই রাতে ঢাকার চারটি নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতে অভিযানের পর ‘বাংলাদেশের ক্যাসিনো’ কালচার নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ক্যাসিনো কালচার শুরু হয়েছিল মূলত ৯০ দশকের শুরুর দিকে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী নেতা সাদেক হোসেন খোকার হাত ধরেই বাংলাদেশে এই জুয়ার আসর চালু হয়। ৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই দুই নেতার ছত্রছায়ায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ কালচার শুরু হয়েছিল। ব্রাদার্সের ওই জুয়ার আসরে সেসময় বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতাই নিয়মিত যেতেন।

খোকার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য সেসময় আরেক বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস আরামবাগ ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেও ক্যাসিনো চালু করেন। পরবর্তীতে খোকা-আব্বাসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরেক প্রভাবশালী নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো শুরু করেছিলেন। তবে সেখানে ভিন্ন রূপে শুরু করা হয়েছিল হাউজি ব্যবসা। ৯১-৯৬ সালে বিএনপির আমলে একমাত্র আবাহনী ছাড়া ঢাকার অন্যসবগুলো ক্লাবেই জুয়া-ক্যাসিনোর বাজার বসানো হয়েছিল। বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতার তত্ত্বাবধান্‌েই এগুলো চলছিল। এরা হলেন সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস ও মোসাদ্দেক আলী ফালু।

বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এই ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল বিএনপির হাতেই। তখনও পুলিশের নাকের ডগায় বসেই এই ক্যাসিনোগুলো চলেছে। সাদেক হোসেন খোকা তখন এমপি থাকার কারণে কেউ তাকে স্পর্শ করার সাহস করেনি। পবর্তীতে ২০০৬ সালে বিএনপির পতনের পর ওয়ান ইলেভেন সরকার আসলে এই ক্যাসিনো বাণিজ্য লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সবগুলো ক্লাবের জুয়ার আসর বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দুই বছর ঢাকায় কোন ক্যাসিনো ছিল না। এরপর আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে ক্যাসিনোগুলো আবার চালু করা হয়।

কিছু ক্যাসিনো চালু করার পেছনে আওয়ামী লীগের কিছু বিপদগামী কর্মী সংশ্লিষ্টতা থাকলেও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত জিরো টলারেন্সের ফলে ছাড় দেয়া হচ্ছেনা কাউকেই। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ক্যাসিনো বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটকের তার বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থা। দুর্নীতি কিংবা মাদক- সকল সমাজেরই একটি কালো অধ্যায়। তবে রাষ্ট্র প্রধান যখন অবস্থান নিয়েছেন এর বিরুদ্ধে, অতিশীঘ্রই যে বাংলাদেশ বিদায় জানাতে যাচ্ছে এই কালো অধ্যায়কে- সে বিশ্বাস রাখাই যায়।


শর্টলিংকঃ