বিএনপি নেতা হাফিজের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে সেনবাহিনীতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। হাফিজসহ তিন জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা দায়ের করেছে র‌্যাব। তবে জামিন পেয়েছেন হাফিজ।

মেজর (অব.) হাফিজকে রোববার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানায়। আর হাফিজের আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন জানান। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জামিন দেন।

শনিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মেজর (অব.) হাফিজকে আটক করে র‌্যাব। তবে তার আগে সকালে ঢাকার পল্লবী এলাকা থেকে আটক করা হয় কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ইসহাক মিয়ানকে। ইসহাক মিয়ান বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরপত্তা দলের প্রধান।

শনিবার দুপুরের পর মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ইসহাক মিয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জিজিটাল আইনে মামলা হয়। আর মুহাম্মদ ইসহাককে শনিবারই সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

জিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৭, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন র‌্যাব-৪ এর এস আই মো. আবু সাইদ। আর আদালতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন এস আই মো. নুরে আলম৷

পুলিশের দায়ের করা এজাহার এবং আদালতে মেজর (অব.) হাফিজের রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গত ২ মে ইসহাক মিয়ানের ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আরেকটি ইমেইলে পাঠানো হয়।

ইসহাক মিয়ান আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মেজর হাফিজ এবং ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন এর সঙ্গে জড়িত।’

এজাহার এবং পুলিশ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘হাফিজসহ অন্যরা ওই ইমেইলের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছিল।’

আদালতের শুনানিতে হাফিজের আইনজীবী বলেন, ‘শনিবার কর্নেল (অব.) ইসহাকের রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদন আর একদিন পর মেজর (অব.) হফিজের রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদন একই। অথচ তাকে আটক করা হয় রাতে। ইসহাকের রিমান্ড আবেদনের সময় হাফিজ ছিলেন দেশের বাইরে বা বিমানে। তাহলে একই ফরোয়ার্ডিং হয় কীভাবে? বিমানে থাকা অবস্থায়ই কি তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়?’

তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। যেই মেইলের কথা বলা হয়েছে, পুলিশ আদালতে সেই ইমেইল উপস্থান করতে পারেনি। তাই এটা বানোয়াট অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই না। আদালত আমাদের যুক্তি গ্রহণ করেছেন। তাই তাকে রিমান্ডে না দিয়ে জামিন দিয়েছেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান বলেন, ‘ইমেইল জব্দ করা হয়েছে। মামলার জব্দ করা মালামালের সঙ্গে তা আছে। এটা আদালতে পাঠানোর বিষয় নয়। আমাদের কাছে যে তথ্য-প্রমাণ আছে তাতে মেজর (অব.) হাফিজ সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে ইমেইলের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন। তাকে সহযোগিতা করেছেন কর্নেল (অব.) ইসহাক।’

জামিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আদালত মনে করেছেন তাই জামিন দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাধীন।’

মামলার বাদী র‌্যাব-৪ এর এস আই মো. আবু সাইদ দাবি করেন, ‘হিরেন মুখার্জি নামের একটি ইমেইলে ইসহাকের মেইলটি পাঠানো হয়। ওই ইমেইল আমার কাছে আছে। ইসহাক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার সরোয়ার হেসেনের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন।’

মামলার জব্দ তালিকায় একটি ল্যাপটপ, ল্যাপটপের চার্জার, মাউস ও একটি মেবাইল সেটের কথা উল্লেখ আছে। মামলার আরেকজন আসামি ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেনকে পলাতক দেখানো হয়েছে।


শর্টলিংকঃ