বিএসএফের হাতে অপহৃত স্বামী-সন্তানের মুক্তির আকুতি পরিবারের


বিশেষ প্রতিবেদক :

কেউ দাঁড়িয়েছিলেন ছেলের মুক্তির দাবিতে, কেউ শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে হাজির হন স্বামীকে ফিরে পেতে। তাদের অভিযোগ, বিএসএফ বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে পদ্মা নদী হতে ধরে নিয়ে গেছে পাঁচ জেলেকে। এরপর তাদের ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে অনুপ্রবেশের মিথ্যে অভিযোগে।

বিএসএফের বিএসএফ কর্তৃক পাঁচ জেলে অপহণের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে হতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে পাঁচ জেলে অপহরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের আলীমগঞ্জে  মৎস্যজীবী সমিতি ও এলকাবাসীর উদ্যোগে এ মাননবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় তারা জানান, গত ৩১ জানুয়ারি পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় গহমাবোনা সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে বিএসএফ ৫ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে বিজিবি’র সঙ্গে পতাকা বৈঠক হলেও অপহৃতদের ফেরত দেয় নি বিএসএফ। উল্টো ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। অথচ তাদের ফেরত আনতে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।অবিলম্বে তারা বিএসএফের হাতে অপহৃতদের মুক্তি দাবি করেন।

বিএসএফ’র হাতে অপহরণের শিকার রাজন আলীর মা ফাইমা বেগম,  শাহিন আলীর স্ত্রী ও   মানববন্ধন চলাকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় শাহিনের স্ত্রী বীথি খাতুন তাদের ৮ মাসের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এই মানববন্ধনে। স্বামীর কথা জানতে চাইলে অঝরো কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের একমাত্র আয়-রোজগার করতেন শাহিন। প্রতিদিনের মতো শাহিন বাড়ির পাশেই পদ্মা নদীতে মাছ ধরছিলেন। এসময় স্পীড বোর্ডে করে কয়েকজন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে  ধরে নিয়ে যায়। শাহিন এখন কী অবস্থায় আছেন-তাও জানা নেই।

বিএসএফের
অপহৃতদের ফিরে পাবার দাবিতে মানববন্ধনে তাদের পরিবারের সদস্যরা

বীথির মতোই আড়াই বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে মানববন্ধনে হাজির হন বিএসএফের হাতে অপহৃত কাবিল হোসেনের স্ত্রী সমিরা খাতুন। তিনি স্বামীকে ফেরত চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলে বাবা বাবা কই, বাবা কবে আসবে-এমন মিনতি করে সারাক্ষণ কান্না করে’। তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্বামী সংসার চালাতে ঋণ করে রেখেছে। মাছ ধরার পর তা বিক্রি করে সেই ঋণের টাকার কিস্তি পরিশোধ করি। কিন্তু পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় বিএসএফ তাকেও ধরে গেছে ভারতে। এখন আমি অসহায় হয়ে দিন পার করছি। দ্রুত আমার স্বামীর মুক্তি চাই’।

বিএসএফের হাতে আটক শফিকুল ইসলামের মা আরজেমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মাছ মারতে গেছিল পদ্মায়। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর থেকেই ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বিএসএফ ধরে নিয়ে গিয়ে আমার ছেলে নির্যাতন করেছে। তাকে মারধর করা হয়েছে। বিনাদোষে কেন আমার ছেলেকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গেল তার বিচার চাই’।

মৎসজীবী সমিতির নেতা আবু তাহের বলেন, বিএসএফ পদ্মা নদীর বাংলাদেরশের সীমানায় যখন তখন ঢুকে গিয়ে আমাদের জেলেদের হেনস্তা করছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একারণে আতঙ্কে জেলেরা পদ্মায় নামতে পারছে না। মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।

এর আগে গত ৩১জানুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খরচাকা সীমান্তে পদ্মা নদী হতে থেকে পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। এরা হলেন- রাজন হোসেন (২৫), সোহেল রানা (২৭), কাবিল হোসেন (২৫), শাহীন আলী (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৩০)। পবা উপজেলার গহমাবোনা গ্রামে তাদের বাড়ি।

ঘটনাপ্রবাহ

 দু’দফা বৈঠকের পরও পাঁচ জেলেকে ফেরত দেয় নি বিএসএফ

পতাকা বৈঠকের সময় দিয়েও হাজির হয়নি বিএসএফ

রাজশাহী সীমান্ত থেকে পাঁচ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ


শর্টলিংকঃ