Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

বিক্ষোভ-অবরোধ উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়


মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, ইবি:

ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ভর্তি ফি, সেশন ফি, পরিবহন ফিসহ সকল প্রকার বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও প্রশাসন থেকে কোন সমাধান না পেয়ে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল)  কঠোর আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ ও ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত আন্দোলন করে তারা। এসময় বিক্ষোভ মিছিল, গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে অবস্থান কর্মসূচী, আমরণ অনশন ও মেইন গেট অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা।

জানা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি, সেশন ফিসহ অন্যান্য ফি ৪ গুন বৃদ্ধিসহ নতুন অনেক খাত বৃদ্ধি করে প্রশাসন। যেখানে পূর্বের সেশনের চেয়ে অনুষদ ভেদে শিক্ষাদান ফি ১৯২-৩০০ টাকা থেকে ১২০০-১৫০০, ভর্তি/ পূনঃভর্তি ফি ১০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, পরিবহন ফি ৭৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২০০ টাকা করাসহ সকল প্রকার ফি কয়েকগুন বাড়ানো হয়।

সেই সাথে ইন্টারনেট ফি, ইন্টারনেট রক্ষণাবেক্ষণ ফি, প্রকাটরিয়াল সার্ভিস ফি, কাউন্সিলিং ফি, জাতীয় দিবস উদযাপন ফি, শিক্ষা উন্নয়ন ফি, ওরিয়েন্টেশন ফি ইত্যাদি নামে বেনামে বিভিন্ন ১৩ টি খাত বৃদ্ধি করা হয়।

নতুন এসব বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী, প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান সহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে। তাদের দাবী ভর্তি ফি, সেশন ফি সহ সকল প্রকার ফি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে অথবা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চেয়ে যৌক্তিক ভাবে বাড়াতে হবে।

সেই সাথে নতুন বৃদ্ধি করা খাতগুলো বাতিল করতে হবে। কিন্তুপ্রশাসন থেকে কোন আশ্বাস না পেয়ে মঙ্গলবার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামে তারা ।

সকাল সাড়ে ৯ টায় ডায়না চত্ত্বর থেকে মিছিল বের করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ১০টার দিকে প্রশাসন ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা।

এসময় তারা ‘বাবার রক্ত যদি সেই চুষতে হবে, প্রাইভেট না হয়ে পাবলিক কেন তবে?’, ‘ছাত্রের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নয়’, ‘অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা হয়, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ফী বাড়ে অপ্রয়োজনে,’ ‘হৈ হৈ রৈ রৈ টাকাগুলো যাচ্ছে কই?’, ‘এক দফা এক দাবি বেতন ফি কমাতে হবে’ এসব স্লোগান দিতে থাকে।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ ও প্রক্টর(ভারপ্রাপ্ত) এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. আনিছুর রহমান ও সাবেক প্রক্টর প্রফেসর মাহবুবর রহমান উপস্থিত হন। আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা।

এসময় শিক্ষার্থীদের অনেকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ফি না কমালে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার আহবান জানায়। আন্দোলনরত এক ছাত্রী জ্ঞান হারালে তাৎক্ষণিক তাকে বিশ্ব বিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসন ভবনের সামনে ২০১৭-১৮ ও ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৪ জন শিক্ষার্থী দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা দেয়।

প্রশাসনিক ভবনের সামনে কয়েক ঘন্টা অবস্থানের পর দুপুর ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও শৈলকুপা রুটে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়িগুলো আটকে পড়ে।

পরে বিকাল সাড়ে ৩ টায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. কামাল উদ্দিন এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, বুধবার ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী প্রত্যেক বিভাগের সভাপতি ও প্রত্যেক অনুষদের ডিনদের নিয়ে ১১ টায় আলোচনায় বসবেন।

সেসময় পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহবান জানান এবং প্রশাসনের নিকট আবারো স্মারকলিপি দিতে বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা পরে শিক্ষার্থীরা ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেয়।

এদিকে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে মেডিকেলে নেওয়া হয়। বিষয়টির একটি সমাধান করা হবে আশ্বাস দিয়ে প্রক্টর অনশনকারীদের অনশন ভাঙ্গান। বুধবার ১২ টার মধ্যে সমাধান না পেলে পূনরায় কঠোর আন্দোলনের কথা জানিয়ে আজকের মতো আন্দোলন স্থগিত করে আন্দোলন কারীরা।


Exit mobile version