বিলে পানি না থাকায় মরতে বসেছে দেড় হাজার হেক্টর জমির বোরো


কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:

সাপাহার উপজেলার জবাই বিলে পানি নেই। তাই সেচের অভাবে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে।এ অবস্থায় কৃষককরা পড়েছেন বিপাকে।তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে,  ইতোমধ্যে সরকারীভাবে উদ্যোগ নিয়ে বিল পাড়ের দুই পাশের প্রায় ১০০টি গভীর নলকুপ থেকে স্কিম অন্তভুক্ত জমি বাদেও বিল এলাকার ফেটে যাওয়া জমিগুলোতে দিনরাত সেচ দেয়া হচ্ছে।

পানিশুন্য বিল। পাশে ধানক্ষেত

কৃষকরা জানান, ঐতিহ্যবাহী জবাই বিলে চলতি মৌসুমে সেচের পানির অভাব দেখা দেয়ার ফলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ধান সেচ সংকটে পড়েছে। দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁর সাপাহার উপজেলার জবাই বিলের দু’পাশের বিস্তির্ণ জমির রোপা বোরো ধান মরে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, জবাই বিলে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকা ও বিল এলাকায় কৃষকের স্থাপনকৃত স্যালো টিওবওয়েল গুলিকে বিদ্যুতায়িত করার ক্ষেত্রে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনীহার কারনে এ সমস্যা  প্রকট হয়েছে।

সরেজমিনে জবাই বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,  জবাই বিলের ডুমরইল ,মাহিল ও কালিন্দা বিলে পর্যাপ্ত পানি তো দূরের কথা, মাঠের পর মাঠ ধানের জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বিলের সংযোগ সেচ ক্যানেল দোহারা তারাচাঁন খাড়িতেও পানি নেই। বিলে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান গাছগুলো পানির অভাবে লালচে রং ধারণ করেছে। এ দৃশ্য দেখে হতাশায় দিন কাটাচ্ছে বিল পাড়ের কৃষকরা।

কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের মানুষ জবাই বিলের ডুমরইল, মাহিল ,কালিন্দা ও দোহারা তারা চাঁন খাড়ির পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির খননকৃত খাড়ির পানি দিয়ে প্রতি বছর ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষাবাদ করে থাকে। এবারে বর্ষা কম হওয়ার ফলে ও বিলের ভাটিতে উঁচু আকারে বাঁধ নির্মাণ না করায় সেচ সংকট তীব্র হয়েছে।

তবে কিছু কিছু এলাকার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন করে ডিজেল তেলের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ করে তাদের বোরো ক্ষেতে শ্যালো মেশিন দিয়ে  সেচ দিচ্ছেন।

সোনাডাঙ্গা গ্রামের বোরো চাষি আবু সাঈদ, এরশাদ আলী,গোপালপুরের মতিউর রহমান,কৈকুড়ির শফিকুল ইসলাম,বাখরপুরের সামশুল হক,শীতলডাঙ্গার বেলাল উদ্দীন,বেলডাঙ্গার আব্দুর রাজ্জাক,জবাই গ্রামের আব্দুল মালেক,মালিপুরের লুৎফর রহমান ,সুন্দরইলের নঈমুদ্দীন বলেন, প্রায় ২০-২৫ দিন পূর্বে বিলের পানি শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে বিনা সেচেই তাদের জমির ধান শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তারা এখন সম্পূর্ন সৃষ্টিকর্তার দিকে চেয়ে রয়েছেন, সৃষ্টিকর্তা তার রহমতের বৃষ্টি দিলে কিছুটা হলেও মৌসুমের কষ্টের ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

তারা আরও জানান, বিল এলাকায় বোরো চাষিদের জন্য সহজ শর্তে বিদ্যুতচালিত শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপনের অনুমতিদানে সংশিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অনিহার কারনেই প্রতি বছর বিলের বিপুল পরিমানের বোরো ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে।

দোহারা তারাচাঁন পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম জানান, মুল বিলের গভীর থেকে পানি আনতে হলে সরকারী উদ্যোগে বিলের প্রবাহিত খাড়ি গুলো আরও গভীর ভাবে খনন করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হ্ক্টের জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। জবাই বিল এলাকায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনুমান ৫৭৫ হেক্টর জমির ফসল সেচ সংকটে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকারীভাবে উদ্যোগ নিয়ে বিল পাড়ের দুই পাশের প্রায় ১০০টি গভীর নলকুপ থেকে স্কিম অন্তভুক্ত জমি বাদেও বিল এলাকার ফেটে যাওয়া জমিগুলোতে দিনরাত সেচ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ এ সমস্যা সমাধানের লক্ষে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, কৃষক পর্যায়ে ডিজেল চালিত শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপনে কোন বাধাঁ নেই তাই তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা স্থাপন করে সেচ সংকট মোকাবেলা করতে পারে। বিদ্যুৎ চালিত শ্যালো স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী বলেন, জবাই বিলের অতি ঝঁকিপুর্ণ সেচ সংকট এলাকায় ফসল রক্ষায় বিকল্প সেচ ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বিল এলাকার প্রায় ১০০টি গভীর নলকুপ থেকে দিন রাত নিরলস ভাবে বোরো জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ